কার্যালয়ে হামলা-ভাঙচুর-আগুন

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। উপজেলার দাউদপুর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে বিভিন্ন কক্ষ ভাঙচুর করা হয়েছে। এ সময় ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম জাহাঙ্গীর মাস্টারের গাড়িসহ অন্তত পাঁচটি গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এমনকি চেয়ারম্যান কার্যালয়ে থাকা বঙ্গবন্ধুর ও প্রধানমন্ত্রীর ছবিও ভাঙচুর করে মেঝেতে ফেলে রাখা হয়।

এ সময় অফিসের গোডাউনে থাকা চার বস্তা সরকারি চাল ও তিন বস্তা কম্বল নিয়ে যায় হামলাকারীরা।

ইউপি কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর, আগুনগতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টা থেকে দুই ঘণ্টাব্যাপী এই হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়। এ ঘটনায় ইউপি চেয়ারম্যানসহ অন্তত ২০ জন আহত হন। প্রত্যক্ষদর্শী ও এলাকাবাসীরা জানায়, সদ্য গজিয়ে ওঠা রংধনু গ্রুপের চেয়ারম্যান রফিকের (আণ্ডা রফিক) ভাই সন্ত্রাসী মিজানের নেতৃত্বে এই হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।

ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর মাস্টারের অভিযোগ, স্বতন্ত্র প্রার্থী (কেটলি) শাহজাহান ভূঁইয়ার পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালান তিনি। সেই ক্ষোভ থেকে রফিকুল এবং তাঁর ভাই মিজানের ভাড়াটে ক্যাডাররা এই হামলা চালিয়েছে।

ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, ‘দুপুর ১২টার দিকে জানতে পারি, ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরের বাইরে রফিক ও মিজানের লোকজন লাঠিসোঁটা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে জড়ো হচ্ছে। তাত্ক্ষণিকভাবে রূপগঞ্জ থানার ওসিকে কল দিয়েও সহায়তা পাইনি।

পরে রূপগঞ্জ সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আবির হোসেনকে ফোন দিয়ে হামলার আশঙ্কা জানানো হয়। কিন্তু সময়মতো তাদের সহায়তা পাইনি। দ্রুত পুলিশ এলে এত বড় ঘটনা হতো না। উপায় না পেয়ে ইউএনওকে জানাই। পরে জেলার এসপি গোলাম মোস্তফা রাসেল ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠালে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

ততক্ষণে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়ে গেছে।’
সরেজমিনে গিয়ে ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে দাউদপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শীতার্ত মানুষের মাঝে কম্বল বিতরণের আয়োজন করেন। অনুষ্ঠান শুরুর আগেই আয়োজনস্থলে রফিক ও মিজানের ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে হামলা চালায়। ইউনিয়ন পরিষদের বিভিন্ন কক্ষে ঢুকে দরজা-জানালা, এসি, সিসি ক্যামেরাসহ অন্যান্য আসবাব ভাঙচুর করে। এ সময় বাইরে থাকা চেয়ারম্যানের হ্যারিয়ার প্রাইভেট কার, চারটি মোটরসাইকেল ও অটোরিকশা পুড়িয়ে দেয় তারা। তখন ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম জাহাঙ্গীর মাস্টার এবং তাঁর লোকজনকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। সন্ত্রাসীরা বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ও ফাঁকা গুলি করায় এলাকায় আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। আশপাশের দোকানপাট বন্ধ করে ব্যবসায়ীরা পালিয়ে যান।

খবর পেয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে অবরুদ্ধ ব্যক্তিদের উদ্ধার করেন। এ ছাড়া পূর্বাচল ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে গাড়ির আগুন নেভান।

এ বিষয়ে দাউদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম জাহাঙ্গীর মাস্টার জানান, রফিক ও মিজানের অনুসারী দাউদপুর ইউনিয়নের আমিন রানা, নজরুল ইসলাম, রফিক, এস টি সাত্তার, কলিঙ্গা এলাকার ইব্রাহীম, রনি, দুয়ারা এলাকার মুকুল বাশার, ঈসমাইল, গোবিন্দপুরের কামরুল হাসান, জামানসহ দুই শতাধিক লোক এই হামলা চালায়। এতে কোটি টাকার ওপরে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বর্তমানে তিনি, তাঁর পরিবারসহ তাঁর অনুসারীরা প্রাণনাশের হুমকিতে রয়েছেন।

সন্ধ্যায় রূপগঞ্জ থানার ওসি দীপঙ্কর চন্দ্র সাহা বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। ঘটনাস্থলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে এবং তদন্ত মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *