‘মর্নিং শোজ দ্য ডে’- এই প্রবাদ যেমন সত্যি, ঠিক তেমনি ‘সকাল সবসময় সঠিক পূর্বাভাস দেয় না’- এই প্রবচনও সত্যি। কানপুর থেকে চট্টগ্রাম- শুক্রবারের (২৬ নভেম্বর) দুইটি ম্যাচের ভিন্ন দুই ঘটনা দেখলেই তা বোঝা যায়।




কানপুরে লড়ছে ভারত ও নিউজিল্যান্ড, শুক্রবার ছিল ম্যাচের দ্বিতীয় দিন। আর চট্টগ্রামে খেলছে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান। ম্যাচের প্রথম দিনই ছিল শুক্রবার। তবে কানপুর ও চট্টগ্রামের শুক্রবারের চালচিত্র ছিল প্রায় একইরকম।




ভারত-নিউজিল্যান্ড: প্রথম টেস্ট, দ্বিতীয় দিন (গ্রীন পার্ক,কানপুর) ভারত: ৩৪৫/১০ (শ্রেয়াস আয়ার ১০৫; টিম সাউদি ৫/৬৯, কাইল জেমিসন ৩/৯১, এজাজ প্যাটেল ২/৯০) নিউজিল্যান্ড: ১২৯/০ (উইল ইয়ং ৭৫*, টম লাথাম ৫০*)




বৃহস্পতিবার প্রথম দিন ৮৪ ওভার খেলে ৪ উইকেটে ২৫৮ রান করেছিল ভারত। উইকেটে তখন ছিলেন শ্রেয়াস আয়ার ও রবীন্দ্র জাদেজা। দুজনেই ফিফটি করে ওয়েল-সেট। গ্রীন পার্কের দর্শকেরা হয়তো তখন চোখ বুঝে ৪০০ রানের স্বপ্ন দেখছিলেন। কিন্তু শুক্রবার দিনের শুরুতেই জাদেজাকে বোল্ড করে স্বাগতিকদের ‘বাড়া ভাতে ছাই দেওয়ার’ কাজটা শুরু করেন টিম সাউদি।




অভিষেকে সেঞ্চুরি করা শ্রেয়াসকেও প্যাভিলিয়নের পথ দেখান সাউদি। প্রথম দিনের সঙ্গে মাত্র ৮৭ রান যোগ করতেই গুটিয়ে যায় ভারত। যেখানে ইশান্ত শর্মাকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলে স্বাগতিকদের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেন কিউই বাঁহাতি স্পিনার এজাজ প্যাটেল।




ভারতের ৩৪৫ রানের জবাবে দুই ওপেনার উইল ইয়ং ও টম লাথামের জোড়া ফিফটিতে নিরাপদে দিন পার করে নিউজিল্যান্ড। আলোকস্বল্পতায় কয়েক ওভার বাকি রেখে দ্বিতীয় দিনের খেলা সমাপ্ত ঘোষণা করেন আম্পায়াররা। ৫৭ ওভার ব্যাটিং করে বিনা উইকেটে ব্ল্যাকক্যাপসদের সংগ্রহ ১২৯ রান। প্রথম দিনে দারুণ অবস্থানে থেকে আজকের খেলা শুরু করে গোমড়া মুখেই দিন শেষ করতে হয়েছে ভারতকে।




বাংলাদেশ-পাকিস্তান: প্রথম টেস্ট, প্রথম দিন (জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম, চট্টগ্রাম) বাংলাদেশ: ২৫৩/৪ (লিটন দাস ১১৩*, মুশফিকুর রহিম ৮২*; হাসান আলি ১/৩৮, ফাহিম আশরাফ ১/৩৮)




শুক্রবার চট্টগ্রামে টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন মুমিনুল হক। পাকিস্তানি বোলারদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে স্বাগতিকদের আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত বুমেরাং হয়ে ফিরতে থাকে মুমিনুলের দিকে। দলীয় ৪৯ রানে স্বাগতিকদের টপঅর্ডারের চার ব্যাটার প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন। যার মধ্যে অধিনায়ক মুমিনুলের উইকেটও ছিল।




মজার বিষয়, সাদমান ইসলাম, সাইফ হাসান, নাজমুল হোসেন শান্ত- তিনজনই ড্রেসিংরুমে ফেরেন ঠিক ১৪ রান করে। এরপরই শুরু হয় মুশফিকুর রহিম, লিটন দাসের প্রতিরোধ। টি-টোয়েন্টি সিরিজে না থাকার ‘ঝাল’ এ দুই বাংলাদেশি ব্যাটার মেটাতে থাকেন শাহিন আফ্রিদি, হাসান আলি ও সাজিদ খানদের ওপরে।




মুশফিক-লিটনের একের পর এক চোখ ধাঁধানো বাউন্ডারিতে সাগরিকার গ্যালারি সমুদ্রের মতো গর্জন করে ওঠে। বিশেষ করে লিটন যেন পাকিস্তানিদের ওপর বেশিই ক্ষিপ্ত ছিলেন। ব্যক্তিগত ৬৭ রানে শাহিনের বলে মিড উইকেটে সাজিদের হাতে জীবন পাওয়ার পর লিটন হয়ে ওঠেন আরও বেপরোয়া, তুলে নেন ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট শতক।




দিনের খেলা শেষ হওয়ার পঞ্চম উইকেট জুটিতে লিটন-মুশফিক মিলে অবিচ্ছিন্ন ২০৪ রান যোগ করেন। আলোক স্বল্পতায় পুরো ৯০ ওভার খেলা না হওয়ায় ৮৫ ওভারেই প্রথম দিনের খেলা শেষ হয়ে যায়। লিটনের সঙ্গী মুশি নিজের ৮ম টেস্ট সেঞ্চুরি থেকে মাত্র ১৮ রান পেছনে আছেন।




প্রথম সেশনে ৪৯ রানে ৪ উইকেট নিয়ে উড়তে থাকা পাকিস্তানকে দিন শেষে ড্রেসিংরুমে ফিরতে হয়েছে একরাশ হতাশা নিয়ে, ঠিক যেমনটা কানপুরে হয়েছে ভারতের সঙ্গে।