নানা আলোচনা-সমালোচনার পর এশিয়া কাপের জন্য ১৭ সদস্যের দল ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। গত কয়েক দিন ধরে বিতর্কের মধ্য দিয়ে যাওয়া সাকিব আল হাসানের কাঁধে নেতৃত্ব ভার তুলে দেওয়া হয়েছে আগামী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পর্যন্ত।




বেটিং বা জুয়া কোম্পানির একটি নিউজ পোর্টালে চুক্তি করে সেটি বাতিল করে সাকিব যদিও ক্ষমা চেয়ে পার পেয়েছেন, তবে বাংলাদেশ স্কোয়াডটা মূলত কীসের ভিত্তিতে করা হয়েছে, তার স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে পারেননি নির্বাচকরা।




এই দলে নেওয়া হয়েছে প্রায় তিন বছর দলের বাইরে থাকা সাব্বির রহমানকে। রয়েছেন আনামুল হক বিজয়, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।




সাব্বির রহমান জাতীয় দল থেকে বাদ পড়েছিলেন ২০১৯ সালে চট্টগ্রামে আফগানিস্তানের বিপক্ষে খেলার পর। দল থেকে বাদ পড়ার পর চারটি ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি খেলেছেন।




২০১৯-২০ বিপিএলে ১১ ইনিংসে ২০৪ রান করেছিলেন ১৮.৫৪ গড়ে। স্ট্রাইক রেট ছিল মোটে ১১২.০৮। একটি ফিফটি করেছিলেন, সেই ম্যাচে করেন টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ ৬২ রান। ২০২০ বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে




৭ ইনিংস ১৭.৬৬ গড়ে ১০৪.৯৫ স্ট্রাইক রেটে করেছিলেন ১০৬ রান। খেলেছিলেন ৫৬ রানের একটা ইনিংস। ২০২১ ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ টি-টোয়েন্টিতে ১২ ইনিংসে ২২.৯০ গড় আর ১০৪.৫৬ স্ট্রাইক রেটে করেন ২০৯ রান। ছিল না ফিফটি, খেলেছিলেন সর্বোচ্চ ৪১ রানের ইনিংস।




আসা যাক ২০২২ বিপিএলে। বাজে পারফরম্যান্সে দল থেকেও বাদ পড়তে হয়েছিল সাব্বিরকে। ৬ ইনিংসে ১০৯ রান করেছিলেন ১৮.১৬ গড় আর ১১১.২২ স্ট্রাইক রেটে। খেলেছিলেন সর্বোচ্চ ৩২ রানের ইনিংস।




জাতীয় দল থেকে বাদ পড়ার পর এতটা বাজে পারফর্ম করেছেন একসময়ের এই হার্ড হিটার ব্যাটার, যা অন্তত এই সময়ে জাতীয় দলে জায়গা পাওয়ার উপযুক্ত নয়। তবে দলের প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু যুক্তি দেখিয়েছেন, ৫০ ওভারের ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের (ডিপিএল) সবশেষ মৌসুম, এইচপি দলের অনুশীলন এবং বাংলাদেশ ‘এ’ দলের সঙ্গে কয়েকটা ম্যাচ।
‘সাব্বির অভিজ্ঞ ক্রিকেটার। ঘরোয়া ক্রিকেটে দেখেছি আমরা, টি-টোয়েন্টিতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিজ্ঞতা আছে ওর। এসব চিন্তা-ভাবনা থেকেই দলে নেওয়া হয়েছে। টিম ম্যানেজমেন্ট ও আমরা সবাই আলোচনা করেই নিয়েছি।’




সবশেষ ডিপিএলে ১২ ইনিংসে ৩৯.৬১ গড় আর ১০২.৩৮ গড়ে ৫১৫ রান করেন একটি সেঞ্চুরি আর একটি ফিফটির ইনিংস খেলেন, যেখানে ছিল না কোনো ধারাবাহিকতা। এখন তিনি বাংলাদেশ ‘এ’ দলের হয়ে তিনটি ওয়ানডে ম্যাচ খেলতে রয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে। নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীনের মতে, ৫০ ওভারের ম্যাচে পারফর্ম করে নিজেকে ঝালিয়ে নেবেন সাব্বির।




‘কিছু কিছু জায়গায় কিছু খেলোয়াড়কে এভাবে চিন্তা করতে হয়, আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা দেখতে হয়। যেহেতু এবার আমাদের ইনজুরি সংখ্যা বেশি, সেদিক থেকে একজন বাড়তি মিডল অর্ডার ব্যাটার দরকার। এ জন্য ওয়েস্ট ইন্ডিজে ‘এ’ দলের হয়ে আমরা ওকে পাঠিয়েছি। সেখানে খেলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের মতো অভিজ্ঞতা পাবে। আশা করছি, ওই অভিজ্ঞতা সে কাজে লাগাবে।’




টি-টোয়েন্টি দল থেকে ২০১৫ সালে বাদ পড়ার পর গত মাসে উইন্ডিজ সফরে আবারো সুযোগ আসে আনামুল হক বিজয়ের। তিন ম্যাচের সিরিজে ১০, ৩ এবং ১৬ রান করার পর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করেন ২৬, ১৬ আর ১৪ রান।
আসা যাক মুশফিকুর রহিম প্রসঙ্গে। সবশেষ দশ ইনিংসে সর্বোচ্চ ৫৭ রানের একটা ইনিংস খেলেছিলেন আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাজে পারফর্মের পর ঘরের মাঠে চলতি বছরের মার্চে আফগানিস্তানের বিপক্ষে এক ম্যাচ খেলার পর বা পড়েন দল থেকে। সবশেষ জিম্বাবুয়ে সফরের টি-টোয়েন্টি সিরিজেও খেলানো হয়নি বিশ্রামের কথা বলে। যদিও মুশফিককে আবার দলে ফেরানো নিয়ে কোনো ব্যাখ্যা দেননি নির্বাচকরা।
মুশফিককে নিয়ে ব্যাখ্যা না দিতে পারলেও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে নিয়ে মিনহাজুল আবেদীন বলেন, ‘এশিয়া কাপ অনেক বড় একটা টুর্নামেন্ট। তাই এই জায়গায় আমরা একজন অভিজ্ঞ খেলোয়াড়কে রাখা দরকার বলেই রেখেছি।’
গুঞ্জন রয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ের পারফরম্যান্সের কারণে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে দলে রাখতে চাননি সাকিব আল হাসান। তাই বলাই যায়, এই দলে জায়গা পেতে পারফর্ম নয় বং একটু অভিজ্ঞতা আর পুরনো সদস্য হলেই জায়গা মেলে!