সাকিব আল হাসান বাঁহাতি অর্থোডক্স বোলার, সোজা বাংলায় যাকে বাঁহাতি স্পিনারই বলা হয়। আঙুল ব্যবহার করে বল করেন। সে বল উইকেটে পড়ে ডানহাতি ব্যাটসম্যানের ক্ষেত্রে বেরিয়ে যাবে, আর বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের ক্ষেত্রে ভেতরে ঢুকবে।




হাতে আরও থাকে আর্মার, যা উইকেটে পড়ে বাঁক না নিয়ে সোজা ঢুকবে (ডানহাতি ব্যাটসম্যানের ক্ষেত্রে)। ২০০৬ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে




অভিষিক্ত সাকিবকে এই দুই ধরনের বলই করতে দেখা গেছে। সে সঙ্গে বল ছোড়ার সময় উইকেটের প্রস্থ, অ্যাকশনের মাধ্যমে সৃষ্ট কোণ আর গতির তারতম্যেই বাংলাদেশের সেরা বোলার সাকিব।




সেই সাকিব আজ চমকে দিলেন। এক বলের জন্য হয়ে উঠলেন লেগ স্পিনার। বাঁহাতি লেগ স্পিন, অর্থাৎ চায়নাম্যান বল করে চমকে দিলেন নিরোশান ডিকভেলাকে।




ইনিংসের ১১১তম ওভারের ঘটনা। সাকিবের সেটি ২৭তম ওভার। শ্রীলঙ্কার রান তখন ৪ উইকেটে ৩১৪। মনে হচ্ছিল শ্রীলঙ্কা রান পাহাড়ে চড়তে যাচ্ছে। এমন অবস্থাতেই ভিন্ন কিছু করার ইচ্ছা জাগে।




ওভারের তৃতীয় বলে স্ট্রাইকে আসেন চান্ডিমাল। বাংলাদেশের দুই বাঁহাতি স্পিনারের বিপক্ষেই বেশ স্বচ্ছন্দ মনে হচ্ছিল চান্ডিমালকে। সাকিব ও তাইজুলের বলে পা ব্যবহার করে বেশ কয়েকটি চার মেরেছেন লঙ্কান ব্যাটসম্যান।




সাকিবের প্রথম দুটি বল ছিল স্টক বল। প্রথম বলটি পড়ে সোজা যাওয়ায় স্বচ্ছন্দে ডিফেন্ড করেছেন। পরের বলটি ছিল বাঁহাতি স্পিন। এক্সট্রা কাভারে ঠেলে দিয়ে রান নিতে চেয়েছিলেন চান্ডিমাল, কিন্তু পারেননি। পরের বলেই চমক।




সাকিবের পঞ্চম বল উইকেটে পড়ে অনেকটা ড্রিফট করে ভেতরে ঢুকেছিল। প্রথমে চমক জেগেছিল, আর্ম বল এতটা ভেতরে ঢুকেছে কীভাবে! চান্ডিমালের প্রতিক্রিয়া দেখে মনে হয়েছিল ভিন্ন কিছু।




রিপ্লে দেখেই চমকে যেতে হলো। শুরুতে সাকিবের বলের গ্রিপ খুব একটা ভিন্ন মনে হয়নি। কিন্তু বল ছাড়ার মুহূর্তে আঙুলের দিক দিয়ে বল না ছেড়ে কবজির মোচড়ে বুড়ো আঙুল সামনে নিয়ে এসেছেন।




বলের অবস্থান বদলাননি, তর্জনী ও বাকি তিন আঙুলের মধ্যে ছিল সেটা। কিন্তু কবজির মোচড়ই যথেষ্ট ছিল। বল অফ স্টাম্পের বাইরে পড়ে মিডল স্টাম্পে চলে গেছে।




এতে চান্ডিমাল চমকে গেলেও বলটা স্বাভাবিক ছন্দেই খেলেছেন। সাকিব যে আচমকা লেগ স্পিন করেছেন এবং তিনি যে সেটা বুঝেছেন, সেটাও দেখিয়ে দিয়েছেন নিজের কবজি উলটে।
পরের বলেই সাকিব আবার নিজের স্টক বলে চলে গেছেন। পরের সেশনে যে দুটি উইকেট নিয়েছেন, সেগুলোও তাঁর স্টক বলে। প্রথমে তাঁর আর্ম বলে বোল্ড হয়েছেন রমেশ মেন্ডিস। পরের বলটা জোরের ওপর ঢোকা এক বল। তাতে এলবিডব্লু লাসিথ এম্বুলদেনিয়া।
তাতে সাকিবের রিস্ট স্পিনার হওয়ার ইচ্ছায় কি প্রভাব পড়বে? এর আগে ভারতের রবিচন্দ্রন অশ্বিন বেশ আয়োজন করেই লেগ স্পিনার হওয়ার চেষ্টা করেছেন।
আইপিএলেও লেগ স্পিন করতে দেখা গেছে তাঁকে। অ্যাকশন বদলে লেগ স্পিনার হতে গিয়ে নিজের অফ স্পিনের ধারই কিছুটা হারিয়ে ফেলেছিলেন অশ্বিন। এ নিয়ে নির্বাচকদের বিরক্তি প্রকাশের পর সে চেষ্টায় ক্ষান্ত হয়েছেন।