৩০ সেকেন্ডের ঘূর্ণিঝড়ে দেড়শতাধিক বাড়িঘর ও দোকান বিধ্বস্ত

মাত্র ৩০ সেকেন্ড। এতে গোপালগঞ্জের দুই উপজেলার অন্তত দেড়শতাধিক বাড়ীঘর ও দোকান বিধ্বস্ত হয়েছে। উপড়ে পড়েছে গাছপালা ও বৈদ্যুতিক খুঁটি। সবকিছু হারিয়ে এখন খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন ক্ষতিগ্রস্তরা। বিদ্যুতহীন হয়ে পড়েছে দুই উপজেলার ৫টি গ্রাম। ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের অর্থিক সহায়তা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।

শুক্রবার (৬ অক্টোবর) দুপুরে মুকসুদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম ইমাম রাজী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্ত ও অসহায় পরিবারের মধ্যে ৩০ কেজি করে চাল বিতরণ করেন।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, বৃহস্পতিবার সারাদিনই চলে টানা বর্ষণ। সন্ধ্যায় হঠাৎ করে মুকসুদপুর উপজেলার বাসুদেবপুর, মহাটালী, ডিগ্রিকান্দি, টিকারডাঙ্গা ও কাশিয়ানী উপজেলার ভাটিয়াপাড়া গ্রামের ওপর দিয়ে বয়ে যায় ঘূর্ণিঝড়। মাত্র ৩০ সেকেন্ড স্থায়ী এ ঝড়ে বিধ্বস্ত হয় অন্তত দেড়শতাধিক বাড়ীঘর ও দোকান। উপড়ে পড়ে গাছপালা ও বৈদ্যুতিক খুঁটি। সহায় সম্বল হারিয়ে এখন নিঃস্ব পরিবারগুলো। খোলা আকাশের নিচে বসবাস করতে হচ্ছে তাদের। বৈদ্যুতিক খুঁটি উপড়ে পড়ায় বিদ্যুতহীন হয়ে পড়েছে গ্রামগুলো। আত্মীয়-স্বজনদের পাঠানো খাবার খেয়ে জীবন বাঁচাতে হচ্ছে তাদের। ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে ঘরের নিচে চাপা পড়ে আহত হয়েছে অন্তত ১৫ জন। এতে প্রায় আনুমানিক দুই কোটি টাকার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই ঘটনায় প্রায় ৬৫টি পরিবারের পাঁচ শতাধিক লোক বাড়ি ছাড়া হয়ে সাইক্লোন শেল্টারসহ বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্ত ডিগ্রীকান্দি গ্রামের তারেক লস্কর জানান, রাত ৮টা নাগাদ আকস্মিক ঘূর্নিঝড় আঘাত হানে। এতে আমার বাড়িঘর ভেঙ্গে মাটিতে পড়ে যায়। পরবর্তীতে এলাকার সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নিয়েছি। পরিবারের লোকজন নিয়ে মানবতার জীবনযাপন করছি। সরকারের কাছে আমাদের সাহায্যের আবেদন জানাই।

মহাটালী গ্রামের কাশেম লস্কর ও আজগার আলী লস্কর বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে হঠাৎ করে ঝড় ওঠে। এ ঝড় মাত্র ৩০ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিট স্থায়ী হয়। ঝড়ের তাণ্ডবে ৪ গ্রামের দেড়শতাধিক বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। অসহায় পরিবারগুলো বসতঘর হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরিবারগুলোকে মানবিক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে।

মুকসুদপুর উপজেলার উজানী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শ্যামল কান্তি বোস বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ১ মিনিটের টর্নেডোতে ৪ গ্রামের ৪০টি পরিবারের ৭০টি বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। এ সময় গাছপালা ভেঙ্গে পড়ে। বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙ্গে বিদ্যুৎ লাইন বন্ধ রয়েছে। টর্নেডোতে ১৫ জন আহত হয়। তারা স্থানীয়ভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। তবে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা করা হচ্ছে।

মুকসুদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম ইমাম রাজী টুলু বলেন, টর্নেডোতে ৪টি গ্রামের ৪০টি পরিবারের ৭০টি ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। বৃষ্টির সঙ্গে প্রবল ঝড়ে বাড়ি-ঘরগুলো ভেঙ্গে পড়ে। আমরা ক্ষয়ক্ষতির পরিমান নিরূপনের কাজ শুরু করেছি। ক্ষতিগ্রস্ত গরিব ও অসহায় পরিবার প্রতি ৩০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়েছে। তালিকা করে তাদের পূর্ণবাসনের ব্যবস্থা করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *