নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী মিরাজকে প্রস্তুত করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে সাকিব

‘মিরাজ হচ্ছে, আমার কাছে মনে হয় এই দলের আনসাং হিরো’ বলছিলেন টাইগারদের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। অনেকে তাকে তরল পদার্থও বলে থাকেন, যে পাত্রে যান সেখানেই রূপ ধারণ করেন।

এবারের বিশ্বকাপের আগে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচে ভিন্ন দুই পজিশনে ব্যাটিং করে খেলেছেন দুটি পঞ্চাশোর্ধ্ব রানের ইনিংস । তার এই ফর্ম আশা দেখাচ্ছে টিম ম্যানেজমেন্টকে। একই সঙ্গে টিম ম্যানেজমেন্টকে স্বস্তি দিচ্ছে প্রস্তুতি ম্যাচে ওপেনার তানজীদ হাসান তামিমের দুটি ইনিংসও।

বিশ্বকাপের উদ্দেশে দেশ ছাড়ার আগে নানা প্রশ্নের উত্তর মেলানো বাকি ছিল টিম ম্যানেজমেন্টের। ওপেনিং, লোয়ার মিডল অর্ডার ছিল সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। সামপ্রতিক সময়ে টপ অর্ডারের অফ ফর্ম, শেষদিকে দ্রুত উইকেট পড়ে যাওয়া নিয়ে বাড়তি চিন্তা লেগেই ছিল। মূল আসর শুরুর আগে যেন দুই প্রশ্নেরই উত্তর মিলে গেলো।

ওপেনিংয়ে লিটন কুমার দাস তো রানে ফিরেছেনই। আরেক ওপেনার জুনিয়র তামিমের প্রথম ম্যাচে ৮৪ আর গতকাল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৪৫ রানের ইনিংস বড়সড় স্বস্তি দিচ্ছে টিম ম্যানেজমেন্টকে। মেহেদী হাসান মিরাজের টানা দুই ফিফটি দেখিয়েছে আশা।

প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অধিনায়কত্ব করেন তিনি। ৩ নম্বরে নেমে খেলেন ৬৪ বলে ৫ চার ও ২ ছক্কায় ৬৭ রানের অপরাজিত ইনিংস।
এরপরও প্রশ্ন ছিল, পরের ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিশ্বমানের বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে পারবেন কিনা! মিরাজ পেরেছেন। গতকাল ইংলিশদের বোলিং আক্রমণে ছিলেন রিচ টপলি, মার্ক উড, ক্রিস ওকস, স্যাম কারানরা। সঙ্গে আদিল রশিদের মতো লেগ স্পিনার। বিশ্বমানের বোলিং আক্রমণ বলতে বোধহয় সন্দেহ থাকার কথা নয়। সেই দলের বিপক্ষে মিরাজ যখন ব্যাটিংয়ে নামেন দলের সংগ্রহ তখন ২ উইকেট হারিয়ে ২৬ রান। চার নম্বরে নামা মিরাজ এরপর আরেক ওপেনার তানজীদ হাসান তামিমকে নিয়ে প্রথমে প্রাথমিক চাপ সামলান।

চাপ কেটে যাওয়ার পর তামিম ফিরলেও মিরাজ ঠিকই তুলে নিয়েছেন টানা দ্বিতীয় ফিফটি। গতকাল ৩০ ওভার খেলার পর বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ হয়ে যায়। তার আগ পর্যন্ত ৭৩ বলে ৮ চারে ৬০ রানে অপরাজিত ছিলেন মিরাজ।

টানা দুই ইনিংসে মিরাজ দেখিয়েছেন দলের স্বার্থে যে কোনো ভূমিকা পালন করতে তিনি প্রস্তুত। বিশ্বকাপে আফগানদের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ টাইগারদের। এই ম্যাচে মিরাজকে মেকশিফট ওপেনার হিসেবে ব্যবহার করতে পারে টিম ম্যানেজমেন্ট। যেখানে অবশ্য ইতিমধ্যে সফল তিনি। গত এশিয়া কাপেই আফগানদের বিপক্ষে ওপেনিংয়ে নেমে ১১৯ বলে ১১২ রান করেন মিরাজ। বলে রাখা ভালো, সেদিন দ্বিতীয়বারের মতো আন্তর্জাতিক ওয়ানডেতে ওপেনিংয়ে নামেন।

কয়েকদিন আগে দেওয়া আলোচিত সাক্ষাৎকারে অধিনায়ক সাকিব বলেন, দলের প্রয়োজনে যে কাউকে যে কোনো পজিশনে খেলতে হতে পারে। আর সেটা পারলেই তিনি ‘টিমম্যান’ হতে পারবে। মিরাজ যেন অধিনায়কের কথাই অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলছেন। আর একই কারণেই মাশরাফি মিরাজকে নিয়ে বলছেন, ‘মিরাজ হচ্ছে, আমার কাছে মনে হয় এক প্রকার আনসাং হিরো, এই দলের। যেখানে তাকে সেট করা হচ্ছে সেখানেই সে রান করছে। আমরা দেখেছি যে পাকিস্তানের সঙ্গে একটি ম্যাচে ১০০ করেছে। বাট মেকশিফ্‌ট ওপেনার এগেইন, আমি আগেও বলেছি যে একমাত্র নির্ভর করছে টিম ম্যানেজমেন্টের ওপর।’

তবে, সাকিব চায় মিরাজকে প্রপার ভাবে ব্যবহার করতে। মিরাজ যতদিন ১০ ওভার করবে, তার ব্যাটিংয়ে প্রমোশন হবেনা। বিপিএলেও সাকিবের অধিনায়কত্বে মিরাজকে ব্যাটিংয়ে প্রমোশন দিয়ে বোলিংটা কম করাতে। টি টোয়েন্টি স্কোয়াড থেকে অনেক আগেই ছিটকে পড়া মিরাজকে সাকিব ক্যাপ্টেন্সি পাবার প্রথম ম্যাচেই ফিরিয়ে আনে।

মিরাজকে ভাবা হয় পরবর্তী সাকিব। নিজেরই প্রতিদ্বন্দ্বী মিরাজকে প্রস্তুত করতে সাকিব সর্বোচ্চ চেষ্টাই করেছে তিনি। যেখানে আট নাম্বারে বিশ্বরেকর্ড গড়া সেঞ্চুরি, ৮০+ এর পরেও অন্যরা মিরাজকে প্রমোশন দেয়নি। সেখানে কিন্তু সাকিব মিরাজকে প্রমোশন দিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *