Home / সর্বশেষ / আধুনিকতায় হারিয়ে যাচ্ছে গরু-মহিষ-ঘোড়ার গাড়ি

আধুনিকতায় হারিয়ে যাচ্ছে গরু-মহিষ-ঘোড়ার গাড়ি

‘আমার গরুর গাড়িতে বউ সাজিয়ে…. যাব তোমায় শ্বশুর বাড়ি নিয়ে’ কিংবা ‘ওকি গাড়িয়াল ভাই আস্তে চালান গাড়ি, ধীরে চালান গাড়ি রে।‘ গরু-ঘোড়ার গাড়ি নিয়ে এমন সব পুরনো দিনের গানগুলো এখনও মানুষের মন-প্রাণে নাড়া দিয়ে যায়।

এসব হারনো দিনের গানগুলো আজও জনপ্রিয় থাকলেও গরু-মহিষ ও ঘোড়ার গাড়ি এখন বিলুপ্তির পথে।কালের গভীরে দিন দিন ফরিদপুর থেকেও যেন হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী গরু-মহিষ ও ঘোড়ার গাড়ি।

গাড়িতো দূরে থাক, আধুনিকতার যাতাকলে গরু, মহিষ ও ঘোড়ার সংখ্যাও কমে গেছে।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফরিদপুরের নয়টি উপজেলায় এক সময় গ্রামগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী বাহন ছিল গরু, মহিষের ও ঘোড়ার গাড়ি।

প্রযুক্তির কারণে দিনে দিনে হারিয়ে যাচ্ছে গরু কিংবা ঘোড়ার গাড়ি ও গাড়িয়াল পেশা। দিন আর সময় বদলানোর সঙ্গে সঙ্গে এখন এসব গাড়ি স্থান পেয়েছে সংবাদপত্র ও বিভিন্ন বইয়ের পাতায়।

তবে ফরিদপুরে চরাঞ্চলের গ্রামসহ কিছু কিছু জায়গায় এখনোও দেখা মেলে গরু-মহিষ আর ঘোড়ার গাড়ি। এসব গাড়ি যারা চালান তাদের বলা হয় গাড়িয়াল। তবে পেশাদার গাড়িয়াল খুঁজে পাওয়া এখন দুষ্কর।

বোয়ালমারী কাজী সিরাজুল ইসলাম মহিলা কলেজের প্রভাষক হিরামন আক্তার স্বপ্না জাগো নিউজকে বলেন, আধুনিক সভ্যতায় ঐতিহ্যবাহী গরুর গাড়ি হারিয়ে যেতে বসেছে। সে কারণে শহরের ছেলে মেয়েদের সঙ্গে সঙ্গে গ্রামের ছেলে মেয়েরাও গরুর গাড়ির শব্দটির সঙ্গে অপরিচিত।

ফরিদপুর সিটি অর্গানাইজেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মো. এমদাদুল হাসান জাগো নিউজকে বলেন, আসলে আমরা যারা ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং প্রকৃতিপ্রেমী আছি সবাই চাই আমাদের আদি ঐতিহ্য টিকে থাকুক। তবে বাস্তবতা ভিন্ন, বিশ্বায়নের যুগে সর্বত্র পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে।

গরু, মহিষ, ঘোড়ার গাড়ি দেখা যায় না বললেই চলে। এই গাড়ি নির্মাণ শিল্পের সঙ্গে যারা যুক্ত ছিলো তারাও পেশা বদল করেছে উন্নত প্রযুক্তির কারণে। ফলে হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের ঐতিহ্যবাহী এসব গাড়ি। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম হয়তো বইয়ের পাতা এবং ইউটিউবে দেখবে এই গরুর গাড়ি।

ফরিদপুর জজ কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সেখ সেলিমুজ্জামান রুকু বলেন, এক সময় ফরিদপুরের প্রত্যেক গ্রামে দেখা যেত এসব গাড়িতে যাতায়াত, যাত্রী পরিবহন, পণ্য আনা নেওয়া। তখন ছিলো মেঠো পথ। এখন আর আগের মতো চোখে পড়ে না খুব একটা।

তবে কৃষ্ণনগর ইউনিয়ন এবং মধুখালী এলাকায় গেলে চোখে পড়ে কিছু গরুর গাড়ি, মহিষের গাড়ি। ঘোড়ার গাড়ির দেখা মিলবে চরাঞ্চলে। সেখানেও যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হলে হয়তো তারাও বিকল্প চিন্তা করবে। এভাবেই হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের ঐতিহ্য।

বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম বলেন, যান্ত্রিক ছোঁয়া আর ডিজিটাল পদ্ধতির কাছে এসব যেন হার মেনেছে। তাই বিলুপ্তপ্রায় এ পেশা আর এসব গাড়ি। প্রত্যন্ত এলাকায় এসব দু‘একটি গাড়ি চোখে পড়লেও শহরাঞ্চলে একেবারেই দেখা যায় না।

ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক ড. হযরত আলী জাগো নিউজকে বলেন, রিকশা বা ঠেলাগাড়ির মতো গরু, মহিষ ও ঘোড়ার গাড়িগুলো পরিবেশবান্ধব যান।

এতে কোনো জ্বালানি খরচ নেই। শব্দ দূষণ নেই। তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ এসব কিছুই এই যানে ব্যবহার হয় না। এই গাড়িগুলো ধীর গতিতে চলে বলে তেমন কোনো দুর্ঘটনাও নেই। কিন্তু যুগের পরিবর্তনে আমাদের ঐতিহ্যবাহী এইসব গাড়ির প্রচলন ফরিদপুর থেকে হারিয়ে যাওয়ার পথে।

Check Also

ব্রাজিলিয়ানদের দাপটে তছনছ হয়ে গেল বার্সেলোনার স্বপ্ন

আরও একবার ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতায় বার্সালোনার নামটি হারিয়ে গেল। চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে ইউরোপা লিগ, সেখান থেকে …

Leave a Reply

Your email address will not be published.