প্রথমবার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের (বিজেএসসি) নিয়োগ পরীক্ষায় সহকারী জজ পদে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন সেলিনা শেলী। তিনি সারা দেশে মোট উত্তীর্ণ ১০২ শিক্ষার্থীর মধ্যে ১৬তম হয়েছেন। সেলিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) আইন বিভাগের ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।
সেলিনা শেলীর বাড়ি সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার চেউটিয়া গ্রামে। শৈশব কেটেছে গ্রামে বাবা মায়ের ছত্রছায়ায়। ছোট থেকেই পড়াশোনার প্রতি খুব আগ্রহ ছিল তার। নিজ এলাকা থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করেন।
জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনেক ছোট থেকেই স্বপ্ন ছিল ম্যাজিস্ট্রেট হওয়ার। তখন ম্যাজিস্ট্রেট মানেই বুঝতাম না। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি প্রস্তুতির সময় ইচ্ছা হয় আইন বিভাগে পড়ার। এ কারণে আমার ব্যাকগ্রাউন্ড মানবিক না থাকা সত্ত্বেও শুধু আইন নিয়ে পড়ার জন্য মানবিক বিষয়ে প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। আইন বিভাগে ভর্তি হওয়ার পর থেকে বিচারক হওয়ার স্বপ্ন মনে বাসা বাঁধে।
সেলিনা শেলী বলেন, বিচারক হওয়ার পেছনে সবচেয়ে বেশি কাজে লেগেছে আমার বাবার স্বপ্নপূরণের জন্য উঠেপড়ে লাগা। বাবার স্বপ্ন ছিল আমি বিচারক হই। তিনি আমার থেকে এটা যেহেতু আশা করেছিলেন, তাই আমি সর্বোচ্চ চেষ্টাটাই করেছি। সব সময় প্রার্থনা করেছি যেন বাবাকে জজের বাবা হিসেবে পরিচয় করাতে পারি।
নিজের প্রস্তুতির বিষয়ে তিনি বলেন, কত ঘণ্টা পড়তাম, এটার হিসাব রাখতাম না। ঘুমানো, খাওয়া, প্রার্থনা ব্যক্তিগত কোনো কাজ ব্যতীত সব সময় পড়াশোনা করতাম। বিজেএসের সিলেবাসের আলোকে বিগত সালের প্রশ্ন বিশ্লেষণ করা এবং আইনের বেয়ার অ্যাক্ট ধরে কনসেপ্ট ক্লিয়ার করে পড়ার চেষ্টা করতাম। মনে না থাকলে বারবার করে দেখতাম। জেনারেল বিষয়ও সিলেবাসের আলোকে নোট করতাম। তবে বারবার স্বপ্ন ভঙ্গ হলেও আত্মবিশ্বাস হারাইনি। নিজের দুর্বলতাগুলো খুঁজে সেই আঙ্গিকে নোট প্রস্তুত করতাম। সে অনুযায়ী পড়াশোনা করেছি।
সেলিনা শেলী আগে দুবার ভাইভা পর্যন্ত গিয়েও সুপারিশপ্রাপ্ত হননি। তবে আত্মবিশ্বাস হারাননি। ফলে তৃতীয়বারে সফল হয়েছেন। সেলিনা শেলী বলেন, চূড়ান্ত সুপারিশের পর অনুভূতি যে কতটা চমৎকার, এটা আসলে বোঝাতে পারছি না। কারণ অত্যন্ত আবেগ ছিল এবং আছে এটার প্রতি।
যারা বিচারক হতে চায় তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, যাদের স্বপ্ন বিচারক হওয়া তাদের বলব সাধনাটা থাকতে হবে প্রবল। স্বপ্নপূরণের জন্য কি করতে হবে সেটা নিজের মধ্যে শতভাগ ধারণ করতে হবে এবং সেই অনুযায়ী নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে। যত বাধা আসুক, ব্যর্থতা আসুক এই প্ল্যাটফর্ম থেকে সরে যাওয়া যাবে না যতক্ষণ সুযোগ থাকবে। অবশ্যই অনেক বেশি অধ্যবসায়ী হতে হবে, এটার বিকল্প কোনো রাস্তা নেই। কম পড়াশোনায় আসলে সম্ভব নয়।
সেলিনা দেশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং রাষ্ট্রের কল্যাণে কাজ করতে চান। তিনি বলেন, আমি সর্বোচ্চ দিয়ে সততা ও ন্যায়-নিষ্ঠার সঙ্গে আইনের মাধ্যমে ন্যায়বিচার বাস্তবায়ন করব।