Home / সর্বশেষ / ১০৪ ঘণ্টা পর উদ্ধার হয়েই কোরআন তেলাওয়াত, নামাজের আফসোস

১০৪ ঘণ্টা পর উদ্ধার হয়েই কোরআন তেলাওয়াত, নামাজের আফসোস

ভূমিকম্পের ধ্বংসস্তূপ থেকে ১৪০ ঘণ্টা পর উদ্ধার হতেই স্ট্রেচারে শুয়ে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেছেন এক ব্যক্তি। তুরস্কের কেহরামানমারাস শহর থেকে এ ঘটনার ভিডিও ইউটিউবে শেয়ার করেছে ভয়েস অব আমেরিকা।

নামাজ আদায় না হবার আফসোস করছে শিশু। উদ্ধার পেয়ে কোরআন তেলাওয়াত করছেন আরেকজন ভিডিওতে দেখা যায়, বিধ্বস্ত ভবনের ধ্বংসাবশেষের নিচ থেকে হামাগুড়ি দিয়ে একটি স্ট্রেচার টেনে আনছে উদ্ধারকর্মীরা। ধীরে ধীরে স্ট্রেচারটি বাইরে বেরোতে থাকলে একপর্যায়ে তাতে শায়িত ব্যক্তির মুখ দেখা যায়।

দীর্ঘ সময় পর বাইরের আলো চেহারায় পড়তেই স্ট্রেচারে শায়িত লোকটি উচ্চস্বরে কোরআন তেলাওয়াত করতে থাকেন। এ সময় উদ্ধারকর্মীদের একজন হাতচাপা দিয়ে তার চোখ ঢেকে দেন। দুইদিক থেকে দুইজন তার হাত চেপে ধরেন। তিনি আরও উচ্চস্বরে সুরা বাকারার শেষ দুটি আয়াত মুখস্থ পড়তে থাকেন। অভাবনীয় এই দৃশ্যে আশেপাশে কয়েকজন তাকবীর ধ্বনি দিতে থাকেন। তেলাওয়াত শেষ হলে স্ট্রেচারটি অপেক্ষমান অ্যাম্বুলেন্সে তুলে নেওয়া হয়।

রয়টার্স জানিয়েছে, উদ্ধারকৃত ব্যক্তির নাম ওসমান। তিনি তুর্কি পুলিশ বাহিনীর সার্জেন্ট। সোমবার তিনি কেহরামানমারাসে নিজ বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। ওইদিন ভোরে ভূমিকম্প আঘাত হানলে ভবনের ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়েন তিনি। তুর্কি পুলিশ সার্ভিস তাকে উদ্ধারের দৃশ্য ভিডিওতে ধারণ করেছে।

ভূমিকম্প পরবর্তী উদ্ধার কার্যক্রমের বেশ কয়েকটি ভিডিও গত ৪৮ ঘণ্টায় তুরস্ক থেকে পোস্ট হয়েছে যেগুলো মানুষের বিশ্বাসের শক্তি ও আশাবাদ তুলে ধরছে।

সৌদি চিকিৎসক ও কলামিস্ট হামাদ আবদুল্লাহ আল-মাদির পোস্টকৃত ভিডিওতে হাসপাতালের বেডে এক তুর্কি শিশুকে ব্যথায় কাতরানোর ফাঁকে বারবার ‘বেসাল্লিয়াম কেম মাসাল্লে’ বলতে শোনা যায়। শিশুটির গলায় ব্যান্ডেজ, মুখের এক পাশে কালো দাগ, ঠোঁটে কালশিরে পড়ে থাকতে দেখা যায়। কপালেও হালকা জখম রয়েছে।

ভিডিওর ক্যাপশনে আবদুল্লাহ আল-মাদি লিখেছেন, এই শিশুটি খাবার অথবা পানি চাইছে না। পরিবারের সদস্যদের দেখার জন্যও কাঁদছে না। বরং এত দীর্ঘ সময় ধ্বংসস্তূপে চাপা থাকায় যে নামাজ মিস হয়েছে, সেজন্য নিজেকে দায়ী করে সে আহাজারি করছে।

মার্কিন রাগবি কিংবদন্তি ও বক্সার সনি বিল উইলিয়ামস তুর্কি দৈনিক ইয়েনি সেফাকের একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন। এতে দেখা যায়, ভেঙে পড়া দেওয়ালের নিচে এক ফুটের চেয়ে কম ফাঁকা জায়গা। তারই মধ্য দিয়ে মাথা গলিয়ে একজন উদ্ধারকর্মী কিছু একটা টেনে বের করতে চাইছেন। দলের অন্যরা ওই উদ্ধারকর্মীর পা টেনে ধরে রেখেছেন।

কিছুক্ষণ পর দেয়ালের ফাঁক গলে এক শিশুর মাথা বেরিয়ে আসে। উদ্ধারকর্মীরা ‘হ্যালো’ বলতেই সে জবাব দেয়, আস-সালামু আলাইকুম। এ সময় কেউ ওয়াআলাইকুম সালাম বলেন, আবার কেউ কলেমায়ে শাহাদাত পড়তে থাকেন।

ভিডিওর সঙ্গে পোস্টে সনি বিল উইলিয়ামস লিখেছেন, এই শিশুটি তীব্র শীতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়েছিল। বাইরের আলো দেখতেই সে প্রথম যাদের সামনে পেয়েছে তাদের কল্যাণ কামনা করে বলেছে- আপনাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক।

তিনি আরও লেখেন, ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর যেসব ফুটেজ বেরিয়ে আসছে তাতে যদি আমার মন ছুঁয়ে যায়, আমি জানি অন্য সবারও মন ছুঁয়ে যাবে। আল্লাহ তাদের দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ রাখুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *