Home / বাংলা হেল্‌থ / হারিয়ে যাচ্ছে কি হালখাতা

হারিয়ে যাচ্ছে কি হালখাতা

বছর কয়েক আগেও ছবিটা ছিল একেবারেই উল্টো! পয়লা বৈশাখের দিন ২০ বাকি থাকতেই দোকানিদের প্রস্তুতি থাকত তুঙ্গে। রোজের ক্রেতা থেকে শুরু করে পরিচিত, অপরিচিত সকল ক্রেতাদের কপালেই জুটত পয়লা বৈশাখের আমন্ত্রণ পত্র। নতুন বছরের বিশেষ এই দিনে দোকানে দোকানে চলত লক্ষ্মী গনেশ পুজো। সেই সঙ্গে চলত হালখাতার আয়োজন। আর একটু সন্ধ্যা গড়াতেই হালখাতা করতে দোকানের সামনে মানুষের ঢল চোখে পড়ত।
figure class=”wp-block-image size-full”>

কী এই হালখাতা- অধিকাংশ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানেই পয়লা বৈশাখের দিন হিসেবের নতুন খাতার উদ্বোধন করা হয়, যার পোশাকি নাম হালখাতা (Halkhata)।করোনা সবকিছুকেই যেন নিমেষেই ওলট-পালট করে দিয়েছে। প্রায় দু বছর ব্যবসায় মার খেয়েছে। এখনও যেন ব্যবসার হাল ফিরেছে তেমনটা নয়। তাই এবারেও হালখাতা নিমন্ত্রণ পর্বে অধিকাংশ দোকানির ভরসা ‘ডিজিটাল ইনভিটিশেন’! সে পাড়ার মুদিখানাই হোক অথবা জামাকাপড়ের দোকান সকলেই তাদের বিশেষ ক্রেতাদের নিমন্ত্রণ পর্ব সারতে ভরসা রাখছেন হোয়াটসঅ্যাপেই।
figure class=”wp-block-image size-full”>

এপ্রসঙ্গে হাতিবাগানের এক ব্যবসায়ী জানালেন, ‘যেভাবে দুবছর ব্যবসা মার খেয়েছে তাতে করে নতুন করে পয়লা বৈশাখে হালখাতা করার সামর্থ্য আমার নেই। আমার মত অনেকেই গুটিকয়েক ‘বিশেষ’ ক্রেতাকে আমন্ত্রণ করেই হালখাতা পর্ব সারছেন। বেশ কিছু সোনার দোকান এখনও কার্ড দিয়ে ক্রেতাদের আমন্ত্রণ করছেন কিন্তু আমাদের পক্ষে তা আর সম্ভব হচ্ছে না’।
figure class=”wp-block-image size-full”>

একটা সময় ছিল যখন দিন ২০ বাকি থাকতেই কলেজ স্ট্রিটের দোকানে সামনে দোকানিদের ভিড় উপচে পড়ত। এবার সেই চেনা ভিড় একেবারেই উধাও। মাছি মারছেন ব্যবসায়ীরা, হালখাতার কার্ডের কোন চাহিদা নেই। কেন? এপ্রসঙ্গে কলেজ স্ট্রিটের এক কার্ড বিক্রেতার কথায়, “ প্রথমত সেভাবে কেনা বেচা নেই, করোনার কারণে ব্যবসায়িক মন্দা এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেননি দোকানিরা। অন্যদিকে রয়েছে ডিজিটাইজেশন।
figure class=”wp-block-image size-full”>

অনেকেই তাদের গুটি কয়েক ক্রেতাদের নিমন্ত্রণ পর্বে ভরসা রাখছেন ডিজিটাল কার্ডের ওপরেই। শুধু হালখাতা বলে নয় বিয়ে অন্নপ্রাশন সবেতেই ডিজিটাল কার্ডের জনপ্রিয়তা বেড়েছে বহুগুণে। এতে ছাপানোর খরচ যেমন কম তেমনই সহজেই মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব। তাই ডিজিটাল কার্ডেই মজেছেন সকলে জানালেন ওপর এক কার্ডের দোকানে মালিক। তাঁর কথায়, এমনিতেই করোনা কালে ব্যবসা মার খেয়েছে তার ওপর পয়লা বৈশাখের হালখাতার কার্ডের অর্ডার সেভাবে আসেনি। ফলে মন্দা যেন কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না আমাদের”।
figure class=”wp-block-image size-full”>

অপর এক দোকানির কথায় “১০০ পিস কার্ড বানাতে যা খরচ পড়ে তার থেকে অনেক সস্তায় ডিজিটাল কার্ডেই কাজ মেটে ফলে অতিরিক্ত খরচ বাড়াতে চাইছেন না কেউই। তার কথাও বছর দুয়েক আগেও পরিস্থিতি ছিল আলাদা। জেলা শহর থেকে শুরু করে খাস কলকাতায় সব মিলিয়ে শুধু হালখাতা কার্ড বাবদ ৫০ হাজার টাকার অর্ডার আসত। এখন অর্ডার সেভাবে আসে না। গুটি কয়েক সোনার দোকান থেকেই যা হালখাতার কার্ডের অর্ডার এসেছে। তাও ১০০ পিস মেরেকেটে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা”।
figure class=”wp-block-image size-full”>

কেন এমন বেহাল অবস্থা হালখাতার? এক ব্যবসায়ীর কথায়, “আগে মূলত মুদিখানা, জামাকাপড়ের দোকান এবং সোনার দোকানেই হালখাতার বিশেষ চল ছিল কিন্তু করোনার কারণে ব্যবসা মার খেয়েছে ফলে অতিরিক্ত খরচ করার মত অর্থ দোকানিদের হাতে নেই। পাশাপাশি জেলাশহর থেকে কলকাতা, একাধিক বহুজাতিক ব্র্যান্ড আসার কারণে খুচরো দোকানগুলি মার খাচ্ছে। মানুষ সেখানে ভিড় করছে। পয়লা বৈশাখে ডিসকাউন্ট অথবা মিষ্টির প্যাকেট হাতে ধরিয়ে দিয়ে ক্রেতাদের মন জোগাচ্ছে। সেখানে হালখাতার চল প্রায় নেই। ফলে হালখাতার ট্রেন্ড ধীরে ধীরে অবলুপ্তির পথে যেতে বসেছে”।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *