ইনিংস পরাজয়ের শঙ্কা ছিল, এমন এক ম্যাচে লিড নিলো বাংলাদেশ। তারপরও আফসোস তো থাকবেই! সাকিব আল হাসান আর নুরুল হাসান সোহানের জুটিটা আরেকটু বড় হলে ভিন্ন কিছুও হতে পারতো!
খালেদ আহমেদ যে দুর্দান্ত বোলিং করে অবিশ্বাস্য কিছুর আশা দেখিয়েছিলেন। অ্যান্টিগা টেস্টে তার আগুনঝরা বোলিংয়ে ৮৪ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ৯ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বসেছিল ক্যারিবীয়রা।
তবে জন ক্যাম্পবেল আর জার্মেই ব্ল্যাকউড দেখেশুনে খেলে শুরুর বিপদ কাটিয়ে দিয়েছেন। তৃতীয় দিন শেষে জয়ের পথে আছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ৩ উইকেটে ৪৯ রান তুলেছে তারা। জিততে হলে আর দরকার ৩৫ রান। ক্যাম্পবেল ২৮ আর ব্ল্যাকউড ১৭ রান নিয়ে চতুর্থ দিনের খেলা শুরু করবেন।
ক্যারিবীয়দের রান তাড়ায় প্রথম ওভারটি করেন মোস্তাফিজুর রহমান। ১ রান আসে ওই ওভারে। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে বল হাতে নিয়েই চমক দেখান খালেদ। ওই ওভারে করেন জোড়া শিকার, নিজের পরের ওভারে তুলে নেন আরও এক উইকেট।
ডানহাতি এই পেসারের প্রথম শিকার ক্রেইগ ব্রেথওয়েট। লেগসাইডে বেরিয়ে যেতে থাকা বলে ব্যাট ছুঁইয়ে উইকেটরক্ষক নুরুল হাসান সোহানের দুর্দান্ত এক ডাইভিং ক্যাচ হন ক্যারিবীয় অধিনায়ক (১)।
তিন বল পর রেইমন রেইফারকে (২) সাজঘরের পথ দেখান খালেদ। বল ছাড়তে গেলে শেষ মুহূর্তে গ্লাভসে লেগে যায়, উইকেটের পেছনে ক্যাচটি লুফে নিতে ভুল করেননি সোহান। পরের ওভারে এসে এনক্রুমাহ বোনারকে (০) দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে বোল্ড করেন খালেদ।
এর আগে প্রথম ইনিংসেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের থেকে ১৬২ রানে পিছিয়ে যায় বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ইনিংসেও ১০৯ রান তুলতে হারায় ৬ উইকেট। এমন জায়গা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে টাইগাররা, ভাবা কঠিনই ছিল।
কিন্তু সাকিব আর সোহান আশা ছাড়লেন না। লাঞ্চ বিরতির আগে হাল ধরলেন। তখন যোগ হয়েছিল মাত্র ৬ রান। বিরতির পর দ্বিতীয় সেশনে চোখ ধাঁধানো ব্যাটিং করেছেন এই যুগল।
এই সেশনে বাংলাদেশ ইনিংস হার এড়িয়ে লিড নিয়েছে। একটি উইকেটও না হারিয়ে ২৭ ওভারে তোলে ৯৫ রান। ৬ উইকেটে ২১০ রান নিয়ে তৃতীয় দিনের চা-বিরতিতে যায় বাংলাদেশ।
সাকিব আর সোহানের লড়াকু এই জুটিতেই ছিল বাংলাদেশের সব আশা-ভরসা। দলের স্বীকৃত ব্যাটারদের শেষ জুটি যে এটিই। অবশেষে শতরানের জুটিটি ভেঙেছেন ক্যারিবীয় পেসার কেমার রোচ। ২৩১ বলে গড়া জুটিটি ছিল ১২৩ রানের। এটিই চলতি টেস্টে দুুই দলের সেরা জুটি।
সাকিব-সোহানের প্রতিরোধে ঘাম ঝরা ওয়েস্ট ইন্ডিজ নতুন বল নিয়ে সাফল্য পেয়েছে। সাকিব শেষতক ধৈর্য হারিয়ে ড্রাইভ করতে গিয়ে ধরা পড়েছেন শর্ট এক্সট্রা কভারে।
অধিনায়কের ক্যাচ নিয়েছেন আরেক অধিনায়ক। ব্রেথওয়েটের ক্যাচ হওয়ার আগে সাকিব করেন ৬৩ রান। ৯৯ বলের ইনিংসে ৯টি বাউন্ডারি হাঁকান টাইগার দলপতি। এটি ছিল তার ক্যারিয়ারের ২৯তম হাফসেঞ্চুরি।
সঙ্গী হারিয়ে বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি সোহানও। তিন ওভার পরই তিনি আউট হয়েছেন। এই উইকেটও নিয়েছেন রোচ। তাকে পয়েন্টে খেলতে গিয়ে এজ হয়ে উইকেটরক্ষকের ক্যাচ হয়েছেন সোহান।
১৪৭ বলে গড়া তার ৬৪ রানের ইনিংসে ছিল ১১টি চারের মার। তারপর লেজটা গুড়িয়ে দিতে সময় লাগেনি ক্যারিবীয়দের। তবে সাকিব-সোহানের ১২৩ রানের লড়াকু জুটিতে ভর করেই ইনিংস হারের শঙ্কায় থাকা ম্যাচে ৮৩ রানের লিড নেয় বাংলাদেশ।
দ্বিতীয় ইনিংসে ৯০.৫ ওভার খেলে অলআউট হয় ২৪৫ রানে । ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে সফল কেমার রোচ। ৫৩ রানে ৫টি উইকেট শিকার করেন এই পেসার। ৩টি উইকেট আলজেরি জোসেফের।