Home / সর্বশেষ / রোজায় অনেকের পাতেই উঠবে না ব্রয়লার মুরগির মাংস

রোজায় অনেকের পাতেই উঠবে না ব্রয়লার মুরগির মাংস

দ্রব্যমূল্য বাড়ছেই। রমজান মাস সামনে রেখেও বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরছে না। সাধারণ ব্যবসায়ীরা মনে করেন, একশ্রেণির অসাধু চক্র বা বাজার সিন্ডিকেট এর জন্য অনেকাংশে দায়ী।

তবে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বারবারই বলছে, রমজানে সব পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা হবে। দেশে খাদ্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে। নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হবে। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন।

দেশে গরু উৎপাদন বাড়ছে। গড়ে উঠছে নতুন নতুন খামার। গরু আমদানিও হচ্ছে। কিন্তু গরুর গোশতের দাম না কমে উল্টো প্রতি বছর কেজিতে ৬০ থেকে ৭০ টাকা করে বাড়ছে।

ফলে চড়া বাজারের কারণে অনেকেই গরুর গোশত কেনা কমিয়েছেন। কেউ কেউ বড় উৎসব ছাড়া গোশতের দোকানেই যাচ্ছেন না। রোজার আগে আরেক দফা দাম বাড়ায় সেহরিতে অনেকেই পাতে তুলবেন না গোশত।

ভোক্তারা বলছেন, সব জিনিসেরই দাম কম-বেশি ওঠানামা করে। কিন্তু গরু কিংবা খাসির গোশতের দাম বেড়ে যাওয়ার পর কখনোই কমতে দেখা যায় না।

কোনো উৎসব এলে বরং দাম আরও এক ধাপ বেড়ে যায়। প্রতি বছর উৎসব ঘিরে দাম বাড়ানোর প্রবণতা দেশে রীতিতে পরিণত হয়েছে।

কিন্তু এসব নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে না সরকার। দাম যে হারে বেড়েছে, তাতে হয়তো এবার রোজায় অনেকের পাতেই উঠবে না গোশত। তবে এ বছর শুধু গরু কিংবা খাসির গোশতের দামই বাড়ছে না, বেড়েছে বয়লার মুরগিরও দাম।

রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যাচ্ছে, প্রতিদিনই কোনো না কোনো খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ছে। সবশেষ ২৪ ঘণ্টায় বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিপ্রতি ২০ থেকে ২২ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

এর আগের দিন গত শনিবারও কেজিতে দাম বাড়ে ৭-৮ টাকা। সে হিসাবে গত শুক্রবারের পর অর্থাৎ তিনদিনে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিপ্রতি ৩০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

গত শুক্রবার প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ২৫০ থেকে ২৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। গতকাল সোমবার তা বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ২৯০ টাকা পর্যন্ত। বিক্রেতারা বলছেন,

সরবরাহ কম থাকায় এমনিতেই মুরগির সঙ্কট। তার ওপর গত দুদিনে বৃষ্টিতে সরবরাহ আরও কমেছে। এ কারণে বাজারে দাম বেড়ে গেছে। তবে এক্ষেত্রে করপোরেট কোম্পানিগুলোর বাজার নিয়ন্ত্রণের বিষয়টিও তাদের কথায় উঠে আসে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ব্রয়লার মুরগির বর্তমান দাম অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে ব্রয়লার মুরগির দাম বাড়তে বাড়তে এখন প্রতি কেজি প্রায় স্বাভাবিক দামের থেকে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। মাসখানেক আগেও প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম ছিল ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা।

খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এতটা বাড়তি দামে ব্রয়লার মুরগি কখনো বিক্রি হয়নি। ব্রয়লারের দাম বাড়ার কারণে এখন বেড়েছে সোনালি ও কর্কসহ দেশি মুরগির দামও। দেশি মুরগির দাম সাধারণের নাগালের বাইরে গেছে অনেক আগেই। গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর রামপুরা, মালিবাগ ও বসুন্ধরা বাজার ঘুরে এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

বসুন্ধরা বাজারের ব্রয়লার বিক্রেতা ফরিদ হোসেন জানান, গত রাতে (রোববার দিনগত রাত) বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম ২৫-৩০ টাকা বেশি গেছে। আগের রাতে (শনিবার দিনগত রাত) বেড়েছে আরও ৫-৬ টাকা। সবমিলে শুক্রবারের পর গতকাল সোমবার পর্যন্ত এ দাম কেজিতে ৩০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি। তিনি জানান,

বাজারে সোনালি মুরগির দাম বেড়েছে এক মাসের ব্যবধানে কেজিতে ৫০ থেকে ৮০ টাকার মতো। কয়েক সপ্তাহ আগে সোনালি মুরগি বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৩২০ থেকে ৩৩০ টাকায়। এখন সেটা ৩৭০-৩৮০ টাকা। এদিকে মালিবাগ বাজারে দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৫৫০ থেকে ৫৭০ টাকায়। গত এক মাসে দেশি মুরগির দামেও বড় পার্থক্য হয়েছে। মাসখানেক আগেও দেশি মুরগির কেজি ৫০০ টাকার কমে পাওয়া যেত।

খামারিরা জানিয়েছেন, উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি ও অনেক খামার বন্ধ হওয়ায় বাজারে ডিম ও মুরগির সঙ্কট দেখা দিয়েছে। তাতে প্রকৃতপক্ষেই দাম কিছুটা বেড়েছে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী দাম আরও বাড়াচ্ছেন।

বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, খাদ্য ও বাচ্চার মূল্যবৃদ্ধির ফলে মুরগির দাম বেড়েছে। তবে এখনকার দাম মাত্রাতিরিক্ত। এত বেশি দামে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হোক, সেটি আমরাও চাই না। কারণ প্রান্তিক খামারিরা বাড়তি দাম পাচ্ছেন না। এ মুনাফা নিয়ে যাচ্ছে করপোরেট কোম্পানিগুলো। তারা প্রতিদিনের দাম নির্ধারণ করেন। বাজার নিয়ন্ত্রণ করেন। এদিন বাজারে গরুর গোশত প্রতি কেজি ৭৫০ টাকা আর খাসির গোশত প্রতি কেজি এক হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *