Home / সর্বশেষ / বৃটেনের মাটির নিচে গোপন মাদ্রাসা! হুবহু দেওয়া হচ্ছে ইসলামের শিক্ষা

বৃটেনের মাটির নিচে গোপন মাদ্রাসা! হুবহু দেওয়া হচ্ছে ইসলামের শিক্ষা

লন্ডনে মাটির নিচের গোপন মাদ্রাসার কথা অনেকেরই জানা। আবার অনেকেই জানেন না, যা গভীর অরণ্যের ভেতর পাহাড়ের নিচে অবস্থিত। প্রায় আড়াই শ’ বছর পূর্বে ইংরেজ পেগানরা এটি প্রতিষ্ঠা করে।

এটি একটি উন্নত মানের ইসলামি মাদ্রাসা। যেখানে কুরআন, হাদিস, ইসলামের ইতিহাস, আরবি সাহিত্য, তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব, বক্তৃতা, বিতর্ক ইত্যাদি বিষয় গুলো অত্যন্ত যত্ন সহকারে শিক্ষা দেয়া হয়।

ইসলামি এমন কোনো বিষয় নেই, যা এখানে শিক্ষা দেয়া হয় না। মেধাবী শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বিষয়ে সুদক্ষ পারদর্শী এবং স্কলার হিসেবে গড়ে তোলা হয়। তবে মজার বিষয় হলো, ওখানকার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা কেউই মুসলিম নয়। সবাই পেগান।

তবে দেখতে বুযুর্গ আলেমদের মত তাদের চেহারা। সুন্নতি লেবাস, মাথায় পাগড়ি, হাতে তাসবীহ এবং ললাটে ঝলমল করে সেজদার চিহ্ন।তারা পড়ালেখা শেষ করে ওখান থেকে বড় আল্লামা ও আকর্ষণীয় সাবলীল ভাষার আধিকারী হয়ে বের হয়।

প্রশ্ন হচ্ছে পেগানরা এই ইসলামি মাদ্রাসা কেন পরিচালনা করে ?ট্রিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন, কেন এর পেছনে কোটি কোটি ডলার ব্যয় করে ? একথা জিজ্ঞেস করেছিলেন ইংরেজদের পরীক্ষিত পরম বন্ধু আলীগড়ের নবাব ছাতারী সাহেব।

নওয়াব ছাতারী আলিগড়ের জমিদার ছিলেন। তিনি মুসলিম লীগ ও কংগ্রেসের বিরোধী এবং ভারতে ব্রিটিশ প্রভুত্ব প্রতিষ্ঠায় ইংরেজদের সার্বিক সহযোগী ছিলেন। আনুগত্যের স্বীকৃতিস্বরূপ ইংরেজ সরকার কর্তৃক নওয়াব ছাতারী উত্তর প্রদেশের গভর্নর নিযুক্ত হন। (মতবাদের মিল থাকার কারণে) যে সব ইংরেজ কালেক্টর পোস্টিং নিয়ে আলীগড়ে আসতেন নবাবের সাথে তাদের মধুর ও গভীর সম্পর্ক গড়ে উঠতো।

একবার ব্রিটিশ সরকার ভারতের সকল গভর্নরকে বৃটেনে ডাকেন। নওয়াব ছাতারীও তখন বৃটেনে যান। ঐ সময় বৃটেনে অবস্থানকারী পুরাতন বন্ধু এবং অনেক অবসরপ্রাপ্ত কালেক্টর ও কমিশনার গভর্নর ছাতারীর সাথে সাক্ষাত করেন।

কালেক্টরদের মধ্যে একজন ছিলেন নবাব সাহেবের ব্যক্তিগতভাবে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ এবং রাজনৈতিক চিন্তা-চেতনার অনেক কাছের ব্যক্তি। তিনি নবাবকে লন্ডনের যাদুঘর ও হাজার বছরের পুরাতন অত্যাশ্চর্য দর্শনীয় বস্তু যা নওয়াব কখনো দেখেননি , তা দেখাতে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব করেন।

নবাব সাহেব বলেন ‘ঐগুলো আমি আগে দেখেছি, তাই আপনি আমাকে এমন কিছু দেখান যা কোন ভিনদেশী আগে দেখেনি’। কালেক্টর সাহেব বললেন ‘ এমন কি হতে পারে যা কোন ভিনদেশী আগে দেখেনি? ঠিক আছে আমি ভেবে-চিন্তে জানাবো’।

তার দু’দিন পরেই কালেক্টর সাহেব এসে নবাবকে বললেন ‘ আমি ইতোমধ্যে খোঁজ-খবর নিয়েছি। আপনাকে এমন জিনিস দেখাবো যা কোন ভিনদেশী কখনো দেখেনি’। কয়েক দিন পর কালেক্টর সাহেব সরকারের লিখিত অনুমতি সমেত নবাব সাহেবের অতিথিশালায় পৌঁছে গেলেন। অত্যাশ্চর্য বস্তু দেখার কর্মসুচী তৈরি করলেন।

কালেক্টর সাহেব বললেন ‘আমার ব্যক্তিগত গাড়িতে যেতে হবে। এই ভ্রমণে সরকারী গাড়ি ব্যবহার করা যাবে না’।পর দিন তারা দু’জন অত্যাশ্চর্য বস্তু দেখতে বের হয়ে গেলেন। লন্ডনের সীমানা পেরিয়ে ছোট্ট একটি সড়ক ধরে গাড়ি যতই এগোতে থাকলো ততো গভীর অরণ্য। কোন যাত্রী বা পথিক চোখে পড়ে না। এভাবে দীর্ঘক্ষণ চলার পর গাড়িটি একটি বিশাল গেটের সামনে গিয়ে থামলো।

উভয় পাশে সশস্ত্র সৈন্যের সতর্ক প্রহরা দেখা গেল। কালেক্টর গাড়ি থেকে নেমে পাসপোর্ট ও সরকারি অনুমতিপত্র গেটে জমা দিয়ে ভিতরে যাওয়ার অনুমতি লাভ করলেন।

কর্মকর্তারা বলে দিলেন নিজেদের গাড়ি বাইরে রেখে ভেতরে তাদের গাড়ি ব্যবহার করতে হবে। সুড়ঙ্গের ন্যায় দু’দেয়ালের মধ্যদিয়ে গাড়ি চলতে লাগলো। সুনিবিড় জঙ্গল আর বৃক্ষলতা ভিন্ন আর কিছুই দেখা যায় না। এভাবে কিছুক্ষণ চলার পর সামনে একটি প্রাসাদ দেখা গেল।

কালেক্টর সাহেব নবাবকে বললেন, ‘প্রাসাদে প্রবেশের পর থেকে ফিরে না আসা পর্যন্ত আপনি আমাকে কোন প্রশ্ন করবেন না। একেবারে চুপচাপ থাকবেন। আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে অতিথিশালায় ফিরে উত্তর দেব’। নবাব রাজি হলেন।প্রাসাদের কিছু দূরে গাড়ি রেখে তারা পায়ে হেঁটে চললেন এবং দেখতে থাকলেন বিপুল সংখ্যক কক্ষ সম্পন্ন প্রাসাদটি গগনচুম্বী ও অতিকায়।

ভেতরে প্রবেশ করে তারা একটি কক্ষের সামনে দাড়ালেন। যেখানে আরবী পোশাক পরিহিত অসংখ্য ছাত্র মাটিতে বিছানো দস্তানায় বসে সবক নিচ্ছে। যেমন আমাদের দেশের মাদ্রাসা ছাত্ররা নেয়। ছাত্ররা আরবী ও ইংরেজী ভাষায় উস্তাদের নিকট প্রশ্ন করছে। আর উস্তাদ সুন্দর ও সাবলীল ভঙ্গিতে ঐ প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন। কালেক্টর সাহেব এভাবে নবাব সাহেবকে প্রতিটি কক্ষ এবং সেখানে যে সকল বিষয়ে শিক্ষা ও বাস্তব ট্রেনিং দেয়া হচ্ছে তা ঘুরে ঘুরে দেখাচ্ছেন।

নবাব সাহেব অবাক বিস্ময়ে প্রত্যক্ষ করেন – কোন কক্ষে কিরায়াত শিখানো হচ্ছে, কোথাও কুরআনুল কারীমের অর্থ ও তাফসীর শিখানো হচ্ছে, কোথাও বুখারী ও মুসলিম শরীফের সবক চলছে, কোথাও মাসয়ালা নিয়ে বিশদ আলোচনা চলছে, কোথাও হচ্ছে ইসলামী পরিভাষার উপর বিশেষ অনুশীলন। একটি কক্ষে দেখা গেলো ধর্মীয়তত্ব নিয়ে দু’গ্রুপের মধ্যে রীতিমত আনুষ্ঠানিক বিতর্ক চলছে।

নবাব সাহেব এসব দেখে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেলেন এবং একজন ছাত্রের সংগে কথা বলতে চাইলেন। কিন্তু কালেক্টর সাহেব তাকে ইশারা করে চুপ থাকতে বললেন।

অতিথিশালায় ফিরে নবাব সাহেব বললেন, এতবড় দ্বীনি মাদ্রাসা যেখানে দ্বীনের প্রতিটি বিষয় উন্নত পদ্ধতিতে শিক্ষা দেয়া হচ্ছে এবং ইসলামের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিষয় নিয়ে বুদ্ধিবৃত্তিক আলোচনা হচ্ছে, দেখে ভালো লেগেছে।

কিন্তু এসব মুসলিম ছাত্রকে এই দূরবর্তী জায়গায় বন্দী করে কেন রাখা হয়েছে? কালেক্টর সাহেব উত্তর দিলেন, ‘এসব ছাত্রদের একজনও মুসলিম নয়। নবাব সাহেব আরও আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘এর কারণ কি?’

কালেক্টর সাহেব উত্তর দিলেন, ‘সুড়ঙ্গ পথে প্রতিষ্ঠিত এ প্রতিষ্ঠান থেকে লিখাপড়া শেষ করে ছাত্রদের মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে পাঠিয়ে দেয়া হয়। (গোয়েন্দা আলিমদের বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে পাঠানোর কারণ হলো- মধ্যপ্রাচ্য হলো ইসলামের উৎস। তাই মধ্যপ্রাচ্য থেকে কোন বিশেষজ্ঞ ইসলামের কোন কথা বললে তা সারা মুসলিম বিশ্বে সহজে গ্রহণযোগ্য হয়ে যায়)।

সেখানে তারা নানান ছলে বলে কৌশলে মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন, ছোট বাচ্চাদের কুরআনের গৃহ শিক্ষক, মাদ্রাসার মুহাদ্দীস বা মুফতি হিসেবে ঢুকে পড়ে। যেহেতু তারা আরবী সাহিত্য ও ইসলামী বিষয়ে পারদর্শী তাই তাদের নিয়োগ পেতে অসুবিধা হয় না।

অনেক সময় ধোঁকা দেয়ার জন্য তারা বলে, আমরা ইংরেজ এবং ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত আলিম। আমাদের অনেকে আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষা লাভ করা। নিজ দেশে দ্বীনি পরিবেশ, বড় মাদ্রাসা এবং পর্যাপ্ত মসজিদ না থাকায় আমরা এখানে এসেছি। শুধু দু’মুঠো ভাত ও মাথা গোঁজার একটি ঠাঁই পেলেই চলবে। আমরা আল্লাহর দ্বীনের জন্য সবকিছু কোরবান করতে প্রস্তুত।’

এভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ঢুকে গিয়ে তারা ষড়যন্ত্র শুরু করে দেয়। বিভিন্ন পদ্ধতিতে (বিশেষ করে ইসলামের জ্ঞানের মধ্যে ভুল ঢুকিয়ে) বিভেদ এবং অনৈক্য সৃষ্টির জন্য তারা অত্যন্ত তৎপর থাকে।

একবার বিভেদের বীজ বপন করতে পারলে, ইন্ধন যুগিয়ে তারা মুসলমানদের বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত করে রক্তপাতও ঘটায়। সামান্য একটি ইসলামী বিষয়কে কেন্দ্র করে সৃষ্টি করে দেয় দাঙ্গা হাঙ্গামার।

[সূত্রঃ প্রতিবেদনটি ভারতের উর্দু পাক্ষিক সাময়িকী ‘তামির-ই-হায়াত’ এ প্রকাশিত প্রতিবেদনের অনুবাদ। প্রতিবেদনটির বিষয়বস্তু হলো – ভারতের নওয়াব ছাতারীর দেখা এক স্থাপনা এবং তার কার্যক্রম। প্রতিবেদনটি মূল বক্তব্য গুছিয়ে দৈনিক ইনকিলাবে ০২.০৪.৯৮ ইং তারিখে ‘বৃটেনের মাটির তলায় গোপন মাদ্রাসা’ শিরোনামে প্রকাশ হয়।]

আজ থেকে শত শত বছর আগে তারা তাদের কার্যক্রম মাটির নিচে গোপন মাদ্রাসা স্থাপন করে বিভেদ সৃষ্টির মিশন শুরু করলেও বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে মাটির উপরেই অনুরুপ মাদ্রাসা স্থাপন করে কার্যক্রম চালানোর সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেয়া যায় না।

কাজেই দ্বীন চর্চায় যার কাছ থেকে ইলম অর্জন করবেন সর্বোচ্চ সাবধানতা ছাড়া কেবল ক্বুরআ’ন ও হাদিসের আলোচনা বলেই গ্রহন করা উচিত হবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *