বর্তমান সময়ে ক্রিকেট ম্যাচের সংখ্যা যে হারে বাড়ছে, তাতে খেলোয়াড়দের ফিট থাকাটাই অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। বড় দলগুলোর পাশাপাশি এই সময়ে বাংলাদেশের ব্যস্ততাও কম নয়।
সেই সঙ্গে ক্রিকেটারদের ইনজুরিতে আক্রান্ত হওয়ার হারও বেড়ে গেছে। ফিট থাকার জন্য খাবার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে―এটা জানা কথা বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা কি সেদিকে নজর দেন?
ক্রিকেট কোচ নাজমুল আবেদীন ফাহিম মনে করেন, বাংলাদেশের কিছু ক্রিকেটার সম্প্রতি খাওয়াদাওয়া নিয়ে সিরিয়াস হয়েছেন। তবে কিছুদিন আগেও বাংলাদেশের অনেক ক্রিকেটারই খাবার নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারটাকে এত গুরুত্ব দিতেন না।
বাংলাদেশের সিনিয়র-জুনিয়র সব পর্যায়ের ক্রিকেটাররা ভাত খেতে খুব পছন্দ করেন। অনেক ক্রিকেটারই অনুশীলন বা ম্যাচের ফাঁকেও এ ধরনের খাবার পছন্দ করতেন।
সৈয়দ আবিদ হুসেইন সামির মতে, বাংলাদেশের ক্রিকেটের সাথে বিরিয়ানি ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে। বিভিন্ন পর্যায়ের ক্রিকেটেই অনেক সময়ই ভাত, বিরিয়ানি কিংবা ফ্রাইড রাইস ধরনের খাবার দেওয়া হয়।
শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাবের ট্রেইনার রুবায়াত হক মনে করেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ভাত একটা বাস্তবতা, যা এড়ানো মুশকিল। তার মতে, ‘এটা কালচারের ব্যাপার। সংস্কৃতিগতকভাবেই আমরা ভাত পছন্দ করি।
এটা হুট করে বন্ধ করে দিলে বা বাদ দিয়ে শরীরে বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়তে পারে। তাই একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়, যেখানে পুষ্টিবিদের সাথে আলোচনা করে ক্রিকেটারদের খাওয়ার পরিমাণটা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। ‘
ভাত বা এ ধরনের খাবারকে ক্রিকেট খেলোয়াড়দের উপযুক্ত বলে মনে করেন না বিকেএসপির ক্রিকেট কোচ নাজমুল আবেদীন ফাহিম। তিনি বলছেন, ‘ভাত খাওয়ার পর অনেক সময় শরীর ছেড়ে দেয়।
এ ক্ষেত্রে কার্বোহাইড্রেটের জন্য পাস্তা বা রুটি জাতীয় খাবার খাওয়া যেতে পারে। ‘ এ ধরনের খাবার অনেক ক্রিকেটার নিজেদের বাড়িতে সব সময় খেতে পারেন না। শীর্ষ পর্যায়ের ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম, মাহমুদ উল্লাহ রিয়াদ ও সাকিব আল হাসানরা নিজস্ব রুটিন মেনে চলতে পারেন।
ভারতের সাবেক অধিনায়ক বিরাট কোহলি ফিট থাকার জন্য তিনি একটা সুনির্দিষ্ট খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করেন, যা তাকে খেলার মাঠে তো বটেই মাঠের বাইরেও একটি সুস্থ জীবন পেতে সাহায্য করে থাকে।
এ জন্য বিরাট কোহলি একটা সুনির্দিষ্ট খাবারের তালিকা তৈরি করেছিলেন, যেখানে মূলত নানা ধরনের শাকসবজি, প্রোটিন, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট পানীয় এবং কফি থাকে। প্রোটিনের জন্য থাকে ডাল, গ্রিল করা স্যামন মাছ এবং মুরগির মাংস।
নাজমুল আবেদীন ফাহিম বলেছেন, ‘শরীর একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। এর ধারণক্ষমতা যত ভালো হবে তত সহনশীলতা তৈরি হবে, তত ভালো শক্তির জায়গা আসবে।
যখনই আমরা শারীরিক কোনো কাজ করি তাতে শরীরে ক্ষয় হয়, সেটা পুষিয়ে নেওয়ার জন্য আমরা খাওয়াদাওয়া করি। শরীরের যেভাবে ক্ষয় হয় ঠিক সেভাবেই সেটা পূরণ করার কাজটা জরুরি।
এমন খাবার খাওয়া উচিত যেটা সারা দিন ধরে শরীরকে এনার্জি দেবে। এ ব্যাপারগুলো বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের একটা সময় পর্যন্ত খুব একটা ভাবায়নি। ‘
তবে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন এসেছে বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান চিকিৎসক দেবাশিষ চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা ঠিক ১০ বছর আগে খাবার নিয়ে যে অবস্থায় ছিল এখন তার থেকে অনেক উন্নতি হয়েছে। ক্রিকেটাররা এখন আগের থেকে অনেক সচেতন এবং আমি ব্যক্তিগতভাবে খুবই খুশি এই বিষয়ে, ক্রিকেটাররা এখন নিজে থেকেই অনেক সময় এসব নিয়ে আগ্রহ দেখায়, যেটা একসময় বিরল ছিল। ‘