তাসকিনে গতি আর আগ্রাসনের আগুন দেখতে চান ডোনাল্ড

নেটে বোলিং শেষে তাসকিন আহমেদকে মাঠের এক পাশে ডেকে নিয়ে গেলেন অ্যালান ডোনাল্ড। সেখানে আর কেউ নেই।

তাসকিনকে অনেকটা সময় নিয়ে কিছু বোঝালেন বাংলাদেশ দলের বোলিং কোচ, তাসকিন নিজ থেকেও জানতে চাইলেন কিছু।

চার দিনেই শেষ হয়ে যাওয়া সেন্ট লুসিয়া টেস্টের পঞ্চম দিনটা ফাঁকা পেয়ে গিয়ে কাল দুপুরের দিকে রাসেল ডমিঙ্গো-ডোনাল্ড-জেমি সিডন্সরা দলের ৯ ক্রিকেটারকে নিয়ে এসেছিলেন ড্যারেন স্যামি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের আনুষ্ঠানিক প্রস্তুতিও শুরু হয়ে গেল এদিনই। আর তাতে বিশেষ দ্রষ্টব্য হয়ে থাকল তাসকিন-ডোনাল্ডের ওই কথোপকথন।

সব ঠিকঠাক থাকলে সীমিত ওভারের দলের সঙ্গেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের উদ্দেশে রওনা দেবেন বলে জানিয়েছেন তাসকিন
চোটের কারণে গত দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের মধ্যেই মাঠের বাইরে চলে যেতে হয় তাসকিনকে।

মাঝে খেলতে পারেননি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হোম সিরিজ এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সদ্য শেষ হওয়া দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজেও।

চোট থেকে ফিরে তাসকিন এখন অপেক্ষায় আগামী ২ জুলাই থেকে শুরু টি-টোয়েন্টি সিরিজ দিয়ে নিজের ফেরাটা সাফল্যের রঙে রাঙাতে।

এর আগে অ্যালান ডোনাল্ড কাল ভালো করে বুঝিয়ে দিলেন বল হাতে তাসকিনের কাজটা আসলে কী হবে। তুমি যে ধরনের বোলার, তোমার ভূমিকা হবে সব সময় গতিময় বোলিং করা এবং আক্রমণাত্মক থাকা।

এটা করতে গিয়ে কখনো তুমি অনেক রান দিয়ে দেবে। আবার কখনো একাই ম্যাচ জিতিয়ে দেবে। তবে তুমি তোমার এই ভূমিকা থেকে কখনো সরবে না।তাসকিনকে অনুশীলনে এমনটাই বলেছেন পেস বোলিং কোচ অ্যালান ডোনাল্ড

তাসকিনের জন্য সেটা নতুন কিছু নয় অবশ্য। বোলিং কোচ মাঠে তাঁকে যে দুটো জিনিস ধারণ করতে বললেন, তাসকিন বেড়েই উঠেছেন সেগুলো নিয়ে—গতি ও আগ্রাসন।

অনুশীলন শেষে তাসকিন জানালেন ডোনাল্ডের সঙ্গে তাঁর কথোপকথনের বিষয়ে, ‘আমি মাত্র চোট থেকে ফিরেছি। ম্যাচে আমার ভূমিকাটা কী হবে, ওটাই কোচ বোঝাতে চাচ্ছিলেন। তিনি বলেছেন, “তুমি যে ধরনের বোলার,

তোমার ভূমিকা হবে সব সময় গতিময় বোলিং করা এবং আক্রমণাত্মক থাকা। এটা করতে গিয়ে কখনো তুমি অনেক রান দিয়ে দেবে। আবার কখনো একাই ম্যাচ জিতিয়ে দেবে। তবে তুমি তোমার এই ভূমিকা থেকে কখনো সরবে না।”’

বোলিং কোচের কাছ থেকে পাওয়া দায়িত্ব পালনে তাসকিনের কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। করোনাকালে পরিশ্রমের আগুনে নিজেকে গড়েপিটে তাসকিন এখন যে নতুন রূপে আবির্ভূত, সেটির সবচেয়ে বড় অলংকারই তো ওই গতি আর আগ্রাসনে ভরা বোলিং।

তাসকিন কাল প্রায় তিন মাস পর দলের সঙ্গে একটা পূর্ণাঙ্গ অনুশীলন করেছেন। ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং—সবই হয়েছে অনুশীলনে। চোট থেকে ফিরে কোনো সমস্যা ছাড়াই প্রথম দিনের অনুশীলন, ঘণ্টা তিনেক অনুশীলনের পর তাসকিন হোটেলে ফিরেছেন স্বস্তি নিয়ে। যাওয়ার আগে তাঁর কথা, ‘অনুশীলনের শুরুতে একটু জড়তা থাকলেও পরে সব ভালোভাবে হয়েছে। এত দিন পর অনুশীলন শুরু করতে পেরে খুব ভালো লাগছে।’

সাকিবের সেই ভালো লাগা আরও বেড়ে গেল অন্য একটা প্রসঙ্গে। টেস্ট সিরিজটা তিনি না খেললেও অ্যান্টিগায় প্রথম টেস্টের পর তাসকিনকে প্রশংসার বানে ভাসিয়েছিলেন অধিনায়ক সাকিব। তাসকিনের কাছ থেকে অন্য পেসারদের অনেক কিছু শেখার আছে।

কঠোর পরিশ্রম করে তাসকিন দেখিয়েছে একজন খেলোয়াড় চাইলে কীভাবে নিজের জীবনটাই বদলে ফেলতে পারেন। তাঁর এই পরিশ্রম সবাইকেই আরও ভালো করার পথ দেখাবে। আর এই যে বাংলাদেশের পেস বোলিংয়ের ধারটা দিন দিন বাড়ছে, সেটার জন্যও সাকিব কৃতিত্ব দিয়েছেন তাসকিনকে। তাঁকে দেখে পাওয়া অনুপ্রেরণা থেকেই ভেতরে ভালো করার ক্ষুধা অনুভব করছেন অন্য পেসাররা।

কাল প্রসঙ্গটা তুলতেই সলজ্জ হাসি হেসে তাসকিন বলছিলেন, ‘সাকিব ভাইয়ের কথাগুলো আমার জন্য অনেক বড় অনুপ্রেরণা। চেষ্টা করব নিজেকে আরও পরিণত বোলার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে, দলকে কিছু দিতে।’

সেই লক্ষ্যে যাত্রাটা তাসকিন ক্যারিবীয় কন্ডিশনে এই টি-টোয়েন্টি সিরিজ থেকেই শুরু করে দিতে পারেন। টেস্ট সিরিজটা ভালো না কাটলেও বাংলাদেশ দলের এই পেসারের আশা, টি-টোয়েন্টি এবং ওয়ানডেতেও তাঁরা হতাশ করবেন না, ‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে টেস্ট সিরিজটা আমাদের ভালো যায়নি। ভুলগুলো নিয়ে কাজ করতে হবে, তবে শুধু এটা নিয়ে বসে থাকা যাবে না। সামনে টি-টোয়েন্টি সিরিজ, এরপর ওয়ানডে। এই মুহূর্তে আমরা টি-টোয়েন্টি সিরিজটার দিকেই তাকিয়ে আছি। চেষ্টা করব ভালো খেলে দেশকে জয় উপহার দিতে।’

বছরের বাকি সময়টাতে বাংলাদেশ দলকে টি-টোয়েন্টি সিরিজই খেলতে হবে বেশি। ডমিনিকা আর গায়ানায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিনটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচকে বলতে পারেন সেই যাত্রারই শুরু। শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠেয় এশিয়া কাপ হবে এবার টি-টোয়েন্টি সংস্করণে, এরপর তো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপও আছে। তাসকিনের চোখও এখন সেদিকেই, ‘প্রতিটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচই এখন আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, সামনে টি-টোয়েন্টির বড় বড় ইভেন্ট আছে। এশিয়া কাপ আছে, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আছে। আমরা এই সিরিজটা জয়ের জন্যই খেলব। যদি এখানে ম্যাচ জিতে আত্মবিশ্বাস বাড়াতে পারি, সেটা বিশ্বকাপের প্রস্তুতিতে কাজে দেবে।’

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অবশ্য কোনো সংস্করণের ক্রিকেটেই বল হাতে মনে রাখার মতো স্মৃতি নেই তাসকিনের। এই দলের বিপক্ষে টেস্ট তো কখনো খেলেনইনি, দুই ওয়ানডে খেলে উইকেট মাত্র একটি, আর টি-টোয়েন্টিও দুটি খেলে উইকেট পাননি একটিও। ২০১৪ সালে সেন্ট কিটসের টি-টোয়েন্টিটা অবশ্য বৃষ্টির কারণে পুরো হতে না পারায় বোলিংয়েরই সুযোগ পাননি তিনি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে সেটাই ছিল তাসকিনের একমাত্র টি-টোয়েন্টি খেলার সুযোগ। এখানে তিনি একমাত্র ওয়ানডেটিও খেলেছেন সে বছরই।

ওয়েস্ট ইন্ডিজে এবার তাসকিনের ভালো করার ক্ষুধাটা তাই আরও বেশিই থাকার কথা। ক্যারিবীয় ‘স্যুভেনির’ হিসেবে কিছু মনে রাখার মতো স্মৃতি নিশ্চয়ই নিয়ে যেতে চাইবেন তিনি। আর সেটার জন্য তাসকিন এখনই আছের সেরা সময়ে।