Home / সর্বশেষ / টেষ্ট ক্রিকেটে প্রথম দিনেই পাকিস্তানের বিপক্ষে নতুন বিশ্ব রেকর্ড গড়লো ইংল্যান্ড

টেষ্ট ক্রিকেটে প্রথম দিনেই পাকিস্তানের বিপক্ষে নতুন বিশ্ব রেকর্ড গড়লো ইংল্যান্ড

পাকিস্তানে এ সময়ে টেস্ট খেলা মানেই আলোকস্বল্পতা। স্বাগতিকদের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের প্রথম টেস্টের প্রথম দিন রাওয়ালপিন্ডিতে খেলা হলো মাত্র ৭৫ ওভার।

ইতিহাস গড়া হয়ে গেল ওই ৭৫ ওভারের মধ্যেই। অভাবনীয় মারকাটারি ব্যাটিংয়ে প্রথম দিনই ইংল্যান্ড তুলে ফেলেছে ৪ উইকেটে ৫০৬ রান!

১৪৫ বছরের টেস্ট ইতিহাসে এই প্রথম টেস্টের প্রথম দিনে কোনো দল তুলল ৫০০ রান। পুরো ৯০ ওভার খেলা হলে না জানি কত রান হতো!

এর আগে টেস্টের প্রথম দিন সর্বোচ্চ ৪৯৪ রান উঠেছিল ১৯১০-১১ মৌসুমে, সিডনিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তুলেছিল অস্ট্রেলিয়া।

ইংল্যান্ডের প্রথম পাঁচ ব্যাটসম্যানের চারজনই আজ পেয়েছেন সেঞ্চুরির দেখা। জ্যাক ক্রলি, বেন ডাকেট, ওলি পোপের পর তিন অঙ্ক ছুঁয়েছেন হ্যারি ব্রুক।

এ চারজনের মধ্যে সবচেয়ে কম স্ট্রাইক রেট ডাকেটের—৯৭.২৭। ‘বাজবল’ যদি আপনার মনে এখনো দাগ কেটে না থাকে, তাহলে এ দিনের স্কোরকার্ডের দিকে তাকাতে পারেন।

রাওয়ালপিন্ডিতে এ টেস্ট শুরু নিয়ে ছিল সংশয়। ইংল্যান্ড ক্যাম্পে ছড়িয়ে পড়েছিল ভাইরাস, টেস্ট ২৪ ঘণ্টা দেরিতে শুরু করার কথাও শোনা যাচ্ছিল।

শেষ পর্যন্ত ঠিক সময়েই শুরু হয় খেলা, এক বেন ফোকস ছাড়া আগেই ঘোষিত ইংল্যান্ড একাদশে আর কোনো পরিবর্তনও আনতে হয়নি

ফ্ল্যাট উইকেটে ব্যাটিং নিতে ভুল করেননি স্টোকস। পাকিস্তান দলে অভিষেক হয়েছে চারজনের, এর মধ্যে তিনজনই বোলার। তবে ফ্ল্যাট উইকেট, প্রতিপক্ষ দলে অনভিজ্ঞ বোলিং লাইন আপ, যেটির কথাই বলুন না কেন,

দিন শেষে হার্শা ভোগলের টুইটটাই বলে দেয় সব, ‘যে কারণই থাকুক না কেন, ৫০৬ রানকে দুর্দান্ত বলতে হবে।’ দুর্দান্ত, অবিশ্বাস্য—বিশেষণ নির্বাচনের ভার নিতে হবে আপনাকেই।

ক্রলির সঙ্গে ইনিংস ওপেন করতে এসেছিলেন ছয় বছরের বেশি সময় পর টেস্ট খেলতে নামা ডাকেট। তবে বেন স্টোকস ও ব্রেন্ডন ম্যাককালাম জুটির প্রথম বিদেশ সফরের প্রথম দিনে ছাপ রাখলেন এই বাঁহাতি ওপেনারও।

প্রথম সেশনে ২৭ ওভারেই ইংল্যান্ড তুলে ফেলে ১৭৪ রান। টেস্টের প্রথম সেশনে ইংল্যান্ডের সেটিই সর্বোচ্চ স্কোর। মধ্যাহ্নবিরতিতে যাওয়ার আগে ক্রলি সেঞ্চুরি থেকে ৯ রান দূরে দাঁড়িয়ে ছিলেন, ডাকেট অপরাজিত ছিলেন ৭৭ রানে।

পরের সেশনটা তুলনামূলক ‘ভালো’ কাটে পাকিস্তানের, ওই সময়ে ১৫৮ রান তুলতে ৩ উইকেট হারায় ইংল্যান্ড। বিরতির পর দ্বিতীয় ওভারে নাসিম শাহকে কাভার ড্রাইভে চার মেরে দিনে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ক্রলি, মাত্র ৮৬ বলে।

কোনো ইংলিশ ওপেনারের এটিই দ্রুততম সেঞ্চুরি। ডাকেটের সেঞ্চুরি করতে লাগে ১০৫ বল, হারিস রউফকে পুল করে চার মেরে মাইলফলকে যান তিনি।

ক্রলি ও ডাকেট ফেরেন পরপর দুই ওভারে। দুজনকেই ফিরিয়েছেন অভিষিক্ত দুজন। জাহিদ মাহমুদের বলে এলবিডব্লু হন ডাকেট, পাকিস্তান সে উইকেট পায় রিভিউ নিয়ে।

ক্রলি বোল্ড হন হারিস রউফের রিভার্স সুইংয়ে। ১১০ বলে ১০৭ রানের ইনিংসে ১৫টি চার মেরেছেন ডাকেট, ২১ চারে ১১১ বলে ১২২ রান ক্রলির।

২ ওভারের মধ্যে ফিরে গেছেন দুজন থিতু ব্যাটসম্যান, তবে তাতে কিছু যায় আসেনি। মুখোমুখি তৃতীয় বলেই রিভার্স সুইপে চার মেরেছেন ওলি পোপ, জাহিদের ওই ওভারে মেরেছেন আরও ২ চার।

ইংল্যান্ডের বাউন্ডারি-উৎসবে ‘ম্লান’ ছিলেন জো রুটই। ৩১ বলে ২৩ রানের ইনিংসে মেরেছেন ৩টি চার, জাহিদকে সুইপ করতে গিয়ে হয়েছেন এলবিডব্লু। পোপের সঙ্গে তাঁর জুটিতে ওঠে ৫৫ বলে ৫১ রান।

পাকিস্তানের ওপর এরপর চড়াও হন পোপ ও হ্যারি ব্রুক। ইংল্যান্ডের রানের গতি আটকাতে না পেরে পার্ট-টাইম বোলার সৌদ শাকিলকে এনেছিলেন বাবর আজম, এ বাঁহাতি স্পিনারের করা ৬৮তম ওভারে ব্রুক মেরেছেন ৬টি চার!

পোপের সেঞ্চুরি অবশ্য হয়ে গেছে তার আগেই, ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরি পেতে তাঁর লেগেছে ৯০ বল। ব্রুকের লেগেছে ৮০ বল। ১২০ বছর আগে গিলবার্ট জেসপ ৭৬ বলে করেছিলেন সেঞ্চুরি,

ব্রুক আরেকটু হলে ইংল্যান্ডের সে রেকর্ড ভেঙে দিতে পারতেন। সেটি না হলেও ঝড় থামেনি। মোহাম্মদ আলীর বলে এলবিডব্লু হয়ে পোপ ফিরেছেন ১০৪ বলে ১৪ চারে ১০৮ রান করে। অধিনায়ক বেন স্টোকস দিন শেষে অপরাজিত ১৫ বলে ৩৪ রান করে।

ক্রিকভিজের ডেটা অনুযায়ী, আজ মুখোমুখি বলগুলোর ৬৪ শতাংশেই আক্রমণ করেছে ইংল্যান্ড। বল বাই বল ডেটা সংরক্ষণ করার পর থেকে কোনো ইনিংসে যেটিই সর্বোচ্চ।

আলোকস্বল্পতায় খেলা বন্ধ হওয়ার পর নিশ্চিতভাবেই সবচেয়ে বেশি স্বস্তি পেয়েছেন পাকিস্তান বোলাররা। আজ সবচেয়ে কম ইকোনমি যাঁর, সেই আলীও ওভারপ্রতি দিয়েছেন ৫.৬৪ করে রান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *