Home / সর্বশেষ / ছোট্ট ভাইকে ৩৬ ঘণ্টা আঁকড়ে রাখল ৭ বছরের বোন

ছোট্ট ভাইকে ৩৬ ঘণ্টা আঁকড়ে রাখল ৭ বছরের বোন

প্রায় শেষ রাত। গভীর ঘুমে পুরো পরিবার। প্রতিদিনের মতো সেদিনও আদরের ছোট ভাইটিকে বুকে নিয়েই ঘুমিয়েছিল বড় বোনটি। কিন্তু সকালটা আর অন্যদিনের মতো হলো না। ঘুমের ঘোরেই পালটে গেল জীবন। আচমকা তীব্র ঝাঁকুনি। পরপরই বিকট শব্দ। কিছু বুঝে ওঠার আগেই মখমলের তুলতুলে বিছানা থেকে ইট-পাথরের ভাঁজে। মাত্র ১ মিনিটে কত কিছু ঘটে গেল!

মাথার ওপর ভাঙা ছাদের চাঁই। ডানে-বায়ে, সামনে-পেছনে সবখানেই জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসেছে টুকরো টুকরো দেওয়াল। মৃত্যুদূত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা চারপাশের যমদূতদের মাঝখানে ছোট্ট, অবুঝ ভাইকে নিয়ে ৭ বছরের বড় বোন। পরম মমতায় আঁকড়ে ধরে আছে ছোট ভাইকে। ঘুটঘুটে অন্ধকার। ভয়ে শুকিয়ে কাঠ গলা। শীতে তিরতির করে কাঁপছে ঠোঁট। মা-বাবা কোথায় জানে না। এভাবে আর কতক্ষণ? কি হবে তাদের? পিঠের ওপারে ওতপেতে আছে নিষ্ঠুর দেওয়াল- এমন হাজারো এলোমেলো চিন্তার ভিড়েও ছোট ভাইকে আগলে রাখতে ভোলেনি ‘বড় বোন’। দরদি পরশে বারবার আঙুল বুলাচ্ছে চুলে। যেন জানান দিচ্ছে, ‘ভয় নেই ভাই। কিচ্ছু হবে না তোমার। বোন আছি তো।’ কিন্তু এভাবে আর কতক্ষণ? কত ঘণ্টা? শেষমেশ সাহায্যের আশায় চিৎকার শুরু করল বোন। ‘স্যার, আমাদের বাঁচান! সারা জীবন গোলাম হয়ে থাকব।’ আটকে থাকা শিশু দুটির মধ্যে বড় বোনের নাম মরিয়ম। আর ছোট ভাই ইলাফ।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো বলছে, মঙ্গলবার রাতে ভাইরাল হওয়া এই হৃদয়বিদারক দৃশ্যে সোমবার ঘটে যাওয়া ভ‚মিকম্পের চেয়েও বড় ঝাঁকুনিতে কেঁপে উঠেছে বিশ্ব মানবতা। ওই ভিডিওতেই দুই ভাইবোনের টানা ৩৬ ঘণ্টা টিকে থাকার লড়াইয়ের খণ্ড চিত্র দেখেছে বিশ্ব। বিপদে বড় বোন মা হয়। গুরুজনদের মুখে মুখে ঘুরে বেড়ানো এ অমিয় বাণীর এবার জলজ্যান্ত প্রতিচ্ছবি দেখল সারা দুনিয়া। কতটুকই বা বড় সে? কতই বা বয়স মরিয়মের? কিন্তু কত দৃঢ়ভাবে ধরেছে দায়িত্বের হাল?

সিরিয়ার হারেমের কাছের ছোট গ্রাম বেসনায়া-বসেনেহর একটি ভবনের ধ্বংসস্ত‚পে চাপা পড়ে ছিল তারা। ভিডিওতে দেখা যায়, ধ্বংসস্ত‚পের মধ্যে থেকেও ছোট ভাইয়ের মাথায় পরম যত্নে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে বড় বোন। শুরু থেকে সাহায্যের জন্য চিৎকার করলেও ৩৬ ঘণ্টার মাথায় উদ্ধারকারীদের আওয়াজ পায় বড় বোন। শীতে শুকনো খসখসে ঠোঁটেই আবার চিৎকার। যেন জোর করে শরীরের শেষ শক্তিটুকু জড়ো করে শেষবারের মতো আরেকটা আকুতি- ‘আমাকে এখান থেকে বের করুন। আপনার জন্য সবকিছু করব।’

পরক্ষণেই আবার, ‘স্যার আমাকে বাঁচান। সারা জীবন আপনার গোলাম হয়ে থাকব।’ শিশুটির এ করুণ আর্তনাদ কানে পৌঁছতেই ছুটে আসে উদ্ধারকারী দল। তারপর শুরু হয় উদ্ধার তৎপরতা। একে একে বের হয় পুরো পরিবার। শিশু দুটির বাবা মোস্তফা জহির আল সাঈদ বলেন, সোমবার ভূমিকম্পের আগে তিনি তার স্ত্রীসহ সন্তানদের নিয়ে ঘুমাচ্ছিলেন। তখনই তিনি অনুভব করেন মাটি কাঁপছে আর তাদের ভবন ধসে পড়ছে মাথার উপর। ধ্বংসস্তূপের নিচে তারা দুদিন আটকে ছিলেন বলে জানান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *