Home / সর্বশেষ / ঘাস চাষে মাত্র কয়েক বছরে সোয়া কোটি টাকার মালিক পলাশবাড়ীর কৃষক

ঘাস চাষে মাত্র কয়েক বছরে সোয়া কোটি টাকার মালিক পলাশবাড়ীর কৃষক

গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার সুলতানপুর বড়ইপাড়া গ্রামের আব্দুল গফুর (৫০)। এক সময় নুন আনতে যার পান্তা ফুরাত, এখন তিনি কোটিপতি। নেপিয়ার জাতের ঘাস চাষ করে কয়েকবছরে তিনি কোটি টাকার সম্পদ করেছেন।

তার সাফল্যে উজ্জীবিত হয়ে এ ঘাসের চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন একই এলাকার আরও কয়েকজন কৃষক। গফুর জানান, ২০০৫ সালের কথা। তখন দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালাতেন তিনি।

স্ত্রীর পরামর্শে সমিতি থেকে সাত হাজার টাকা ঋণ নিয়ে একটি গাভী কেনেন। পরে গাভীর ভালো খাবার যোগাড় করতে গিয়ে জানতে পারেন নেপিয়ার ঘাসের কথা।

সেই নেপিয়ার ঘাসই তার ভাগ্য বদলে দিয়েছে। নেপিয়ার ঘাস বিক্রি করে বর্তমানে ১০ বিঘা জমি, পাকা বাড়িসহ সোয়া কোটি টাকার মালিক গফুর।

আব্দুল গফুর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, পলাশবাড়ী উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের চিকিৎসক মোস্তফা কামালের পরামর্শে নেপিয়ার ঘাস চাষ শুরু করেন। প্রথমে নিজেই পাঁচ শতক জমিতে ঘাস লাগান। ধীরে ধীরে তিনি ঘাস চাষের পরিমাণ বাড়াতে থাকেন।

২০০৯ সালেও বর্গা নেয়া তিন বিঘা জমিসহ মোট সাত বিঘা জমিতে নেপিয়ার চাষ করতেন তিনি। বর্তমানে তিনি বাণিজ্যিকভিত্তিতে নিজের ২০ বিঘা জমিতে নেপিয়ার ঘাস চাষ করেন। প্রতিমাসে ঘাস বিক্রি করছেন ৯০ হাজার টাকা। খরচ বাদে তার মাসিক আয় ৭০ হাজার টাকা।

তার পরিবারের সদস্য ৬ জন। স্ত্রী আছিয়া বেগম গৃহিণী। বড় ছেলে আতিয়ার রহমান ও দ্বিতীয় ছেলে ফারুক হাসান তার সঙ্গে ঘাষ চাষ করেণ। ছোট ছেলে শাকিল অষ্টম ও একমাত্র মেয়ে ফারহানা সপ্তম শ্রেণিতে লেখাপড়া করছে।

গফুর আরও জানান, ঘাস ব্যবসার আয় দিয়ে তিনি পাকা বাড়ি, ১০ বিঘা জমি, দুইটি গাভী, দুইটি শ্যালো মেশিনসহ প্রায় সোয়া কোটি টাকার সম্পদ করেছেন।

তার দুই ছেলে ছাড়াও পাঁচজন শ্রমিক প্রতিদিন রিকশা-ভ্যানযোগে পলাশবাড়ী, ঢোলভাঙ্গা, ধাপেরহাট ও গাইবান্ধা শহরে ঘাস বিক্রি করেন। নতুন বছরে আরও দশবিঘা জমিতে ঘাসচাষ ও ডেইরি ফার্ম করার প্রয়োজনীয় যোগাড়-যন্ত্র শেষ করে এনেছেন বলে জানান কৃষক আব্দুল গফুর।

সরেজমিনে সুলতানপুর বড়ইপাড়া গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, আব্দুল গফুরের সাফল্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে মাসুদ মিয়া, সিরাজুল ইসলাম ও আব্দুর রশিদসহ অর্ধশতাধিক কৃষক নেপিয়ার ঘাস চাষ করেছেন।

মাসুদ মিয়া বলেন, “আগে এই ঘাস সম্পর্কে আমার কিছু জানা ছিল না। গফুর ভাইয়ের সাফল্য দেখে আমিও একবিঘা জমিতে ঘাসচাষ করছি। এ থেকে প্রতিমাসে নয় হাজার টাকা আয় হচ্ছে।”

একই গ্রামের কৃষক সিরাজুল ইসলাম বলেন, “গত বছর দুই বিঘা জমিতে ঘাসচাষ করেছি। নিজের গাভীকে খাওয়ানোর পরও মাসিক চৌদ্দ হাজার টাকার ঘাস বিক্রি করতে পারছি।”

দেড়বিঘা জমিতে ঘাস চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন ওই গ্রামের আরেক কৃষক আব্দুর রশিদ। গাইবান্ধা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আবুল কাশেম বলেন, গাইবান্ধা জেলায় একমাত্র আব্দুল গফুরই বাণিজ্যিকভাবে ঘাস চাষ করছেন। এ ঘাস গবাদি পশুর একটি আর্দশ খাদ্য। এ কারণে চাহিদাও ব্যাপক।

প্রাণিসম্পদ বিভাগ থেকে এসব কৃষককে সহায়তার পাশাপাশি সাফল্যের ভিডিও চিত্র ধারণ করে বিভিন্ন সেমিনারে প্রদর্শন করে কৃষকদের নেপিয়ার ঘাস চাষে উদ্ধুদ্ধ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *