কাগজে-কলমে অদম্য এক দল হয়ে উঠেছিলো আর্জেন্টিনা। ২০১৯ সালের জুলাইয়ের পর থেকে হারের স্বাদ কি জিনিস, তা যেন ভুলেই গিয়েছিলো দলটি।
টানা ৩৬ ম্যাচ অপরাজিত থেকে খেলতে আসে বিশ্বকাপ। আর সেখানেই পথ হারিয়ে অতলে ডুবে গেলো আলবিসিলেস্তারা।
সি’ গ্রুপের প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবের বিপক্ষে ২-১ গোলে হেরে গেলো এবারের বিশ্বকাপের অন্যতম ফেভারিট আর্জেন্টিনা। যা কাতারে অনুষ্ঠিতব্য ২২তম বিশ্বকাপের প্রথম অঘটন।
ম্যাচের শুরু থেকে সৌদি আরবের উপর চাপ সৃষ্টির চেষ্টা চালায় আর্জেন্টিনা। ম্যাচের ৩ মিনিটে প্রথম আক্রমণ চালায় আর্জেন্টিনা। ডি বক্সের ভেতর থেকে মেসির নেয়া শটটি ঠেকিয়ে দেন সৌদি আরব গোলরক্ষক।
বারবার আক্রমণ সামলাতে শুরু থেকেই শরীর নির্ভর ফুটবলের প্রদর্শনী দেখায় সৌদি আরব। কর্ণারের সময় ডি বক্সে সৌদি ফুটবলারের অবৈধ বাঁধা দেয়ার অভিযোগ আনে আর্জেন্টাইনরা।
ভিএরআর রেফারির সাহায্য নিয়ে পেনাল্টির ঘোষণা দেন রেফারি। সেখান থেকে গোল করে ১০ মিনিটে আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে দেন লিওনেল মেসি।
একের পর এক আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়ে সৌদি আরব। ২২ মিনিটে মেসি দ্বিতীয় গোল করলেও, অফসাইডের কারণে তা বাতিল হয়। ২৭ মিনিটে আর্জেন্টিনাকে দ্বিতীয় সাফল্য এনে দেন লাউতারো মার্টিনেজ। মাঝমাঠ থেকে বাড়িয়ে দেয়া বল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে বোকা বানান গোলরক্ষককে।
তবে এবারো নেমে আসে অফসাইডের খড়গ। বাতিল করা হয় গোল। ম্যাচের ৩৬ মিনিটে মেসির পাস থেকে আবারো জাল খুঁজে নেন লাউতারো মার্টিনেজ। তবে এবারো অফসাইডের ফাঁদে পড়ে আর্জেন্টিনা। ফলে অপরিবর্তিত থাকে স্কোরলাইন।
অন্যদিকে ম্যাচে যেন আগ্রাসনের পসরা বসিয়েছিলো সৌদি আরব। একের পর বাজে ট্যাকলের শিকার হন ডি মারিয়া-গোমেজরা। তবে বারবার সৌদি ফুটবলারদের সাবধান করলেও তার প্রতিফলন দেখা যায়নি আরব দেশটির ফুটবলারদের মাঝে।
প্রথমার্ধ্বের খেলার যোগ করা সময়ে ডি মারিয়া আরো একটি সুযোগ পেলেও কাজে লাগাতে ব্যর্থ হন। ইনজুরির কারণে বিরতির আগেই মাঠ থেকে উঠে যেতে হয় সৌদি অধিনায়ক সালমানকে। বাকি সময়ে আর কোন গোল না হলে ১-০ গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় আর্জেন্টিনা।
ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধ্বে খেলার মোড় পাল্টে যায়। প্রথমার্ধ্বে আর্জেন্টিনার গোলমুখে কোন শট নিতে না পারা দলটি যেন খোলনলচে পাল্টে যায়। একের পর এক আক্রমণ চালাতে থাকে আর্জেন্টিনার রক্ষণে। ম্যাচের ৪৮ মিনিটে দারুণ এক গোলে সৌদি আরবকে সমতায় ফেরান সালেহ আল শেহরি। এতে ম্যাচের মোমেন্টাম অনেকটাই ঢেলে পরে আরব দেশটির দিকে। বারবার আর্জেন্টাইন রক্ষণে আক্রমণ চালাতে থাকে দলটি। ফলশ্রুতিতে ৫৮ মিনিটে দ্বিতীয় গোল আদায় করে নেয় সৌদি আরব। দলের হয়ে দ্বিতীয় গোল করেন সালেম আল দাওসারি।
এতে ম্যাচে আধিপত্য দেখাতে থাকে সৌদি আরব। আর নিজেদেরকে হারিয়ে খুঁজতে থাকে টানা ৩৬ ম্যাচ অপরাজিত থেকে বিশ্বকাপ খেলতে আসা আর্জেন্টাইনরা। রক্ষণ, মাঝমাঠ কিংবা আক্রমণ ভাগ কোথাও নিজেদের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেন নি মেসি-ডি মারিয়ারা। শঙ্কা জাগে হার দিয়ে বিশ্বকাপ শুরুর। ডাগআউটে কোচ লিওনেল স্কালোনির চেহারার ভাঁজই স্পষ্ট করে আর্জেন্টাইন শিবিরের চিত্র।
খেলায় ফিরতে মরিয়া হয়ে ৫৯ মিনিটেই দলে তিন পরিবর্তন আনেন আর্জেন্টাইন কোচ লিওনেল স্কালোনি। ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো, লিয়ান্দ্রো পারদেস ও গোমেজের পরিবর্তে লিসান্দ্রো মার্টিনেজ, জুলিয়ান আলভারেজ ও ফার্নান্দেজকে মাঠে নামান তিনি। তারপরও পরিস্থিতি বদলায়নি। মাঠে বলের দখল রাখতেই হিমশিম খাচ্ছিলেন আকাশি নীল জার্সিধারীরা।
৬৩ মিনিটে তাগলিফিয়াকোর হেড গোললাইন থেকে ক্লিয়ার করেন সৌদি গোলরক্ষক। ৭২ মিনিটে আর্জেন্টিনার আরো একটি আক্রমণ প্রতিহত হয়। ৮৪ মিনিটে ডি পলের ক্রস থেকে হেড করেন মেসি। যা সরাসরি গ্লাভসে জমা করেন মোহাম্মদ আল ওয়াইজ। ম্যাচের বাকি সময়েও আর কোন উল্লেখযোগ্য সুযোগ সৃষ্টি করতে।
দ্বিতীয়ার্ধ্বের অতিরিক্ত সময়ের প্রথম মিনিটে প্রায় নিশ্চিত একটি সুযোগ গোললাইন থেকে হেডে ক্লিয়ার করে দেন সৌদি ডিফেন্ডার আলতামবাকতি। জমাট রক্ষণে মেসি-ডি মারিয়াদের কোন সুযোগই দেয়নি সৌদি আরব। শেষ মুহুর্তে জুলিয়ান আলভারেজের আরো একটি হেড মুঠোয় পুরে নেন ওয়াইজ।
লিড ধরে রেখে নিজেদের ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে স্মরণীয় জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে সৌদি আরব। সেই সাথে উড়তে থাকা আর্জেন্টিনাকে নামিয়ে আনলো মাটিতে।