ঋতু চক্রের আবর্তনে আবার এসেছে নতুন একটি বাংলা বছর-১৪২৯। আজ পহেলা বৈশাখ, বাংলা ১৪২৯। ১৪২৮ সনকে বিদায় জানিয়ে বাংলা বর্ষপঞ্জিতে যুক্ত হলো নতুন বছর। পরপর দুই বছর করোনা মহামারির কারণে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান সীমিত কিংবা ঘরোয়া পরিবেশে হলেও এবার নানান আয়োজনের মধ্য দিয়ে বাঙালি বরণ করবে নতুন বছরকে।
figure class=”wp-block-image size-full”>
নববর্ষ উদযাপন পরিণত হয়েছে বাংলাদেশের সার্বজনীন উৎসবে। আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সামিল হয় উৎসবে। আজ বৃহস্পতিবার, ১৪২৯ বঙ্গাব্দের প্রথম দিন। পহেলা বৈশাখ। বর্ষবরণ নয় শুধু, বাঙালির অভূতপূর্ব সাংস্কৃতিক জাগরণের উৎসব। মহোৎসবে যোগ দেবে সারাদেশ। তপোবহ্নির শিখা জ্বালো জ্বালো/নির্বাণহীন নির্মল আলো…। অফুরান এই আলোয় আজ উদ্ভাসিত হবে বাংলাদেশ।
figure class=”wp-block-image size-full”>
বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এক বাণীতে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন দেশবাসীকে। তিনি বলেছেন, বাঙালি জাতির শাশ্বত ঐতিহ্যের প্রধান অঙ্গ পহেলা বৈশাখ। পহেলা বৈশাখ বাঙালির জাতীয় জীবনে পরম আনন্দের দিন। আনন্দঘন এ দিনে তিনি দেশে ও দেশের বাইরে বসবাসরত সব বাংলাদেশিকে বাংলা নবর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, এদিনে চির নতুনের বার্তা নিয়ে আমাদের জীবনে বেজে উঠে বৈশাখের আগমনী গান। দুঃখ, জরা, ব্যর্থতা ও মলিনতাকে ভুলে সবাই জেগে ওঠে মহানন্দে। বাঙালি জাতির শাশ্বত ঐতিহ্যের প্রধান অঙ্গ পয়লা বৈশাখ।
figure class=”wp-block-image size-full”>
বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীকে গতকাল (১৩ এপ্রিল) শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায় বলেন, ‘জীবনের এই পথ, কে বলিতে পারে/বাকি আছে কত/…ক্ষমা করো আজিকার মতো পুরাতন বরষের সাথে/পুরাতন অপরাধ যত। ’
figure class=”wp-block-image size-full”>
সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়ে শেখ হাসিনা ১৪২৯ বঙ্গাব্দের শুভ মুহূর্তে বাঙালি জাতীয়তাবাদের অসাম্প্রদায়িক চেতনায় স্নাত হয়ে সবাইকে নিয়ে বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের একটি সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, পারস্পরিক সৌহার্দ্য আর ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে আসুন বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করি। যেখানে বৈষম্য থাকবে না, মানুষে মানুষে থাকবে না কোনো ভেদাভেদ, থাকবে না ধর্মে-ধর্মে কোনো বিভেদ।
figure class=”wp-block-image size-full”>
দেশে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ কমে আসায় সংক্রমণ এড়ানোর বিধি-নিষেধের বেড়াজাল বিলুপ্ত হওয়ায় স্বাভাবিক মঙ্গল শোভাযাত্রার পথও খুলেছে। ফলে আজ বৃহস্পতিবার ১৪২৯ বঙ্গাব্দকে স্বাগত জানাতে আগের মতো সকাল ৯টায়ই শুরু হবে শোভাযাত্রা। শুরু হবে টিএসসি থেকে, তবে এবার শাহবাগের দিকে না এগিয়ে যাবে নীলক্ষেতের দিকে। ঢাকার প্রথম মেট্রোরেলের কাজ চলায় শাহবাগ থেকে টিএসসি পর্যন্ত সড়ক সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে বলে শোভাযাত্রার গতিপথে এই পরিবর্তন বলে জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন।
figure class=”wp-block-image size-full”>
নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে রামনা বটমূলের সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন। এবার বটমূলে ছায়ানটের শিল্পীদের পাশাপাশি অন্যান্য শিল্পীরাও আয়োজনে উপস্থিত থাকবেন। প্রতি বছর ১২৫ জন শিল্পী আয়োজনে অংশগ্রহণ করলেও স্বাস্থ্যবিধির কথা মাথায় রেখে এবার ১০০ জন শিল্পী অংশগ্রহণ করবেন।
figure class=”wp-block-image size-full”>
রমনায় এবারের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান শুরু হবে ভোর ৬টা ১৫ মিনিটে। শেষ হবে ৮টা ৩০ মিনিটে। আয়োজনে এবার গেটের সংখ্যা আটটি। তার মধ্যে প্রবেশপথ তিনটি যথাক্রমে অরুণোদয়, রমনা রেস্তোরাঁ ও অস্তাচল। বের হওয়ার পথ দুটি যথাক্রমে বৈশাখী ও উত্তরায়ন। একইসঙ্গে প্রবেশ এবং বের হওয়ার পথ তিনটি যথাক্রমে শ্যামলিমা, স্টার গেট এবং নতুন গেট।
figure class=”wp-block-image size-full”>
এ ছাড়া আগত দর্শনার্থীদের জন্য রয়েছে জরুরি চিকিৎসাসেবা। নারী, সিনিয়র সিটিজেন ও শিশুদের জন্য বিশ্রামাগার। রয়েছে লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড সেবা। তবে রমজান মাস হওয়ায় এবার থাকছে না কোনো খাবারের দোকান।
figure class=”wp-block-image size-full”>
নববর্ষ উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটির দিন। জাতীয় সংবাদপত্রগুলো বাংলা নববর্ষের বিশেষ দিক তুলে ধরে ক্রোড়পত্র বের করেছে। সরকারি ও বেসরকারি টিভি চ্যানেলে নববর্ষকে ঘিরে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালা প্রচার করছে।
figure class=”wp-block-image size-full”>
বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে নববর্ষ উদযাপন পরিণত হয়েছে বাংলাদেশের সার্বজনীন উৎসবে। পয়লা বৈশাখের ভোরে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর আয়োজনে মেতে উঠবে সারাদেশ। বর্ষবরণের এ উৎসব আমেজে মুখরিত থাকবে বাংলার চারদিক। গ্রীষ্মের খরতাপ উপেক্ষা করে বাঙালি মিলিত হবে তার সর্বজনীন এই অসাম্প্রদায়িক উৎসবে। দেশের পথে-ঘাটে, মাঠে-মেলায়, অনুষ্ঠানে থাকবে কোটি মানুষের প্রাণচাঞ্চল্য।
মূলত, ১৫৫৬ সালে কার্যকর হওয়া বাংলা সন প্রথমদিকে পরিচিত ছিল ফসলি সন নামে, পরে তা পরিচিত হয় বঙ্গাব্দ নামে। কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ সমাজের সঙ্গে বাংলাবর্ষের ইতিহাস জড়িয়ে থাকলেও এর সঙ্গে রাজনৈতিক ইতিহাসেরও সংযোগ ঘটেছে। পাকিস্তান শাসনামলে বাঙালি জাতীয়তাবাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয় বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের। আর ষাটের দশকের শেষে তা বিশেষ মাত্রা পায় রমনা বটমূলে ছায়ানটের আয়োজনের মাধ্যমে। এসময় ঢাকায় নাগরিক পর্যায়ে ছায়ানটের উদ্যোগে সীমিত আকারে বর্ষবরণ শুরু হয়। আমাদের মহান স্বাধীনতার পর ধীরে ধীরে এই উৎসব নাগরিক জীবনে প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করে।
পয়লা বৈশাখের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বাঙালির অসাম্প্রদায়িক এবং গণতান্ত্রিক চেতনার বহিঃপ্রকাশ ঘটতে থাকে। কালক্রমে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান এখন শুধু আনন্দ-উল্লাসের উৎসব নয়, এটি বাঙালি সংস্কৃতির একটি শক্তিশালী ধারক-বাহক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। শুধু তাই নয় , উৎসবের পাশাপাশি স্বৈরাচার-অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদও এসেছে পহেলা বৈশাখের আয়োজনে।
১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে বের হয় প্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রা। যা ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর ইউনেস্কো এ শোভাযাত্রাকে বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মর্যাদা দেয়।